আ.লীগে হঠাৎ কয়েক শ সহসম্পাদক-সদস্য

আওয়ামী লীগের সম্পাদকীয় পদের অধীনে উপকমিটি গঠন নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে দলের দপ্তর থেকে সহসম্পাদক ও সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি নিজেকে উপকমিটির সহসম্পাদক ও সদস্য পরিচয় দিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। আর যাঁদের নাম নেই তাঁরা দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে গিয়ে এবং পরিচিত নেতাদের কাছে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন নেতাদের কাছে থাকা নামের তালিকার স্বাক্ষরদাতার স্থলে দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহানের নাম লেখা রয়েছে। তবে দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আবদুস সোবহান সাধারণত যে সই ব্যবহার করেন, সেটির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। আছে শুধু অনুস্বাক্ষর (ইনিশিয়াল)। ফলে এই তালিকাগুলো সঠিক কি না এবং সঠিক হলে তা প্রকাশ্যে কেন প্রচার করা হয়নি—এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের নেতারা। গত বুধবার থেকে কোনো কোনো সম্পাদককে নামের তালিকা দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পাঁচজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি কমিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। উপকমিটির সহসম্পাদক ও সদস্য করার ক্ষেত্রে এই লুকোচুরি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও জানেন না তালিকা সম্পর্কে। যাঁদের নামের তালিকা আসছে, তাঁদের বেশির ভাগ সদস্যদের সম্পাদকেরাই চেনেন না।

ওই নেতারা আরও বলেন, আগের কমিটিতে হাজার হাজার সহসম্পাদক নিয়োগ দেওয়ার ফলে সমালোচনায় পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে। একপর্যায়ে এসব সহসম্পাদকের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় সচিবালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করা। এ জন্য এবার সহসম্পাদক নিয়োগে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

দপ্তর উপকমিটির সহসম্পাদক হিসেবে নাম দেখা গেছে কে এম কবির হোসেনের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাম থাকার কথা তিনি জেনেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটিতে নাম থাকা কামরুজ্জামান আনসারি বলেন, তাঁকে দলীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। আর শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সহসম্পাদক আবিদুর রহমান বলেন, এই বিষয়ে কথা বলার অনুমতি নেই।

আবু আশেক জুবায়ের নিজেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিগত কমিটির সহসম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন, তাঁকে এবার রাখা হয়নি। অথচ ঢাকা কলেজে ছাত্রদল করা অনেকে সহসম্পাদক হয়েছেন।

এই বিষয়ে আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, সম্পাদকেরা যেসব তালিকা দিয়েছেন, এরই খসড়া এটি। এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়। দলের সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করলে দলীয় প্রধানের অনুমোদন নেওয়া হবে। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা ঠিক করেননি।

সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। এই বিষয়ে জানি না।’

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের অধীনে একটি করে উপকমিটি রয়েছে। দলটির সম্পাদকীয় পদ আছে ১৯টি। প্রতিটি উপকমিটির সভাপতি আগেই ঘোষণা করা হয়েছে এবং তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুসারে উপকমিটির সদস্যসচিব হবেন ওই বিভাগের সম্পাদক। বাকিরা সহসম্পাদক ও সদস্য।

গঠনতন্ত্রে উপকমিটিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষজ্ঞ, সংসদীয় কমিটির সভাপতি, সহযোগী সংগঠনের নেতা ও অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহসম্পাদক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উপকমিটির তালিকায় তিন থেকে পাঁচজনসহ সম্পাদকের নাম এবং ২০-২২ জন করে সদস্যের নাম দেখা গেছে।

এর বাইরে ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের অধীনে এবার সহসম্পাদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে মোতাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকদের গড়ে তিনজন করে সহসম্পাদক দেওয়ার কথা জানা গেছে। সব মিলিয়ে এবার প্রায় ৬০০ নতুন নেতা বা সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যাঁদের নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা, গৃহিণী, জেলা বা অন্য কমিটিতে রয়েছেন—এমন ব্যক্তিদের নামও তালিকায় আছে। আবার ছাত্রলীগের সাবেক গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা বাদ পড়েছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে উপকমিটির কাজ হিসেবে তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ ছাড়াও সময়-সময় নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করার কথা। প্রতি তিন মাসে একবার করে সভায় বসবে উপকমিটি। দু-একটা উপকমিটি ছাড়া বাকিদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ দূরে থাক, বৈঠকই হয় না বলে দলীয় সূত্র জানায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থাকা অবস্থায় গত বছর মে মাসে দলীয় এক কর্মসূচিতে বলেছিলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ অফিসের কোনো তরুণের সঙ্গে ধাক্কা লাগলেই বলে, আমি সহসম্পাদক। কিসের সহসম্পাদক? আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। সহসম্পাদক যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়ে গেছে, এতে কারও মর্যাদা নেই। প্রত্যেক উপকমিটির সহসম্পাদক জেলায় গিয়ে মাতব্বরি করে, উপজেলায় গিয়ে দাপট দেখায়।’