জোড়াতালির সেতু, ঝুঁকিতে চলাচল

গৌরীপুর বাজার-ছান্দ্রা সড়কের দাউদকান্দি উপজেলার মাইথারকান্দি খালের ওপরকার জোড়াতালি দেওয়া সেতু l প্রথম আলো
গৌরীপুর বাজার-ছান্দ্রা সড়কের দাউদকান্দি উপজেলার মাইথারকান্দি খালের ওপরকার জোড়াতালি দেওয়া সেতু l প্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার-ছান্দ্রা সড়কের মাইথারকান্দি খালের ওপর নির্মিত পাকা সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে চলছে। উপায় না থাকায় সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লোকজন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর বাজারের সঙ্গে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সড়ক যোগাযোগ সহজ করার জন্য ১৯৬৮ সালে মাইথারকান্দি খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটি দৈর্ঘ্যে ৬৫ ও প্রস্থে ১০ ফুট। এই সেতুটি পাঁচ বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতু দিয়ে কয়েকজন লোক একসঙ্গে আসা-যাওয়া করলে যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

মাইথারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রব মোল্লা বলেন, এ সেতু দিয়ে উপজেলার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়, গৌরীপুর বিলকিছ মোশাররফ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সানরাইজ স্কুল, ডা. আরজু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ভয়েজার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, আনন্দ মাল্টিমিডিয়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, আল আজহার স্কুল, গৌরীপুর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, গৌরীপুর মাইলস্টোন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আল ফাতাহ স্কুল ও গৌরীপুর আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং মাইথারকান্দি, পূর্বপেন্নাই, রামনগর, ওলানপাড়া, গৌরীপুর, হাটচান্দিনা, ছান্দ্রা, আমিরাবাদ ও ইটাখোলা গ্রামের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসী এ সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে।

গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া, শাহজাদা ও জাহিদ হাসান বলে, জোড়াতালির এই সেতুতে একসঙ্গে কয়েকজন উঠলে সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম দেখা দেয়। ভাঙা স্থানে পা আটকে মাইথারকান্দি গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল খালেকসহ অনেকে আহত হয়েছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসী এ সেতু দিয়েই নিয়মিত যাতায়াত করছেন।

মাইথারকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল লতিফ, ব্যবসায়ী রুবেল মোল্লা বলেন, বৃহত্তর গৌরীপুর বাজারের সঙ্গে মাইথারকান্দিসহ আশপাশের গ্রামের দূরত্ব কমাতে ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ সেতুটি নিয়মিত ব্যবহার করছে। একসময় এ সেতু দিয়ে যানবাহনও চলাচল করত। পাঁচ বছর ধরে সাধারণ মানুষও চলাচল করতে ভয় পায়।

গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলাচলের জন্য খালের ওপর সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ভেঙে যাওয়া পাটাতনে কাঠ ও ঢালাই দিয়ে মেরামত করে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলাচলের উপযোগী রাখা হচ্ছে।

গৌরীপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য নূরুল আমিন বলেন, ‘সেতুটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখাতে গত বছরের ১ ডিসেম্বর এলজিইডি দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের লোকজনকে এনেছি। এতে আমার ৫ হাজার টাকা খরচ হয়।’

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম সরকার বলেন, ‘গৌরীপুর বাজারসংলগ্ন মাইথারকান্দি খালের ওপর সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসী নিয়মিত এ সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে। ফলে এ স্থানে জরুরি ভিত্তিতে একটি পাকা সেতু নির্মাণ প্রয়োজন। বিষয়টি এলজিইডি ও জনস্বাস্থ্যের দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি।’

উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল হক বলেন, মাইথারকান্দি খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দীর্ঘদিন না হওয়ায় চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হওয়ায় এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ে এ সেতুর কোনো আইডি নাম্বার নেই। ফলে এ স্থানে নতুন করে পাকা সেতু নির্মাণের বরাদ্দ চেয়ে তালিকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।