আর নয় জল ঘোলা

সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান।
সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের বিরোধ আর যাতে না বাড়তে পারে, সেটাই এখন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এ জন্য কার দোষ বেশি, কার কম—এটা নিয়ে আর জল ঘোলা না করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমনভাবে দ্বিধাবিভক্ত যে ওই দিনের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ আগে থেকেই বিভক্ত। এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাই কার দোষ বেশি, এটা খোঁজার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলীয়
প্রধান দুই পক্ষকেই সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ যাতে আর অশান্ত না হয়, উভয় পক্ষকে সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

তবে অস্ত্র হাতে থাকা নিয়াজুল ইসলামসহ অন্যদের কার কী ভূমিকা, তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অস্ত্রসহ নিয়াজুলের ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়াজুলকে গ্রেপ্তার করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সরকারি দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, তাতে নিয়াজুলের ঘটনাটি হজম করা সরকারি দল বা পুলিশের জন্য বেশ কঠিন।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য শামীম ওসমানকেই বেশি দুষছেন। তবে কেউ কেউ তাঁর ফাঁদে পা দেওয়ার জন্য আইভীকে দায়ী করেছেন। জেলার বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতাই এখন তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। তাঁরা মনে করেন, এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ার মতো অবস্থায় আর নেই। তবে দলীয় প্রধান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দুই পক্ষকে সংযত হয়ে চলার জন্য চাপ আরও বাড়াবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

গত মঙ্গলবার শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত করা নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালান সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থকেরা। হামলায় আইভী, ১০ সাংবাদিকসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। ঘটনাস্থলে শামীম ওসমানের ক্যাডার বলে পরিচিত নিয়াজুল ইসলামকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। পরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ছিল পরিকল্পিত ঘটনা। অনেক দিন ধরে ঝগড়া না করায়, সংবাদে না আসায় তিনি (শামীম ওসমান) ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছেন। তবে যেটা ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত।’

অন্যদিকে সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থক বলে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল বলেন, ‘সেদিনের ঘটনা নিয়ে কিছু বলব না। জনগণ সব দেখেছে, এটা তারাই বিচার করবে। বিষয়টি কেন্দ্র গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ঘটনাটি অবশ্যই অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি দেখছে।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে আবদুল হাইকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সহসভাপতি ও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন করে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, দুই কারণে কমিটিতে আইভীর চাওয়াকেই গুরুত্ব দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। প্রথমত, জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আইভী মেয়র হওয়ায় সারা দেশে দলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলে দল মনে করে। দ্বিতীয়ত, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের যে বদনাম রয়েছে, তা ঘোচাতে শামীম ওসমানকে কোণঠাসা করা হয়।

ছাড় দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। পুলিশের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য যা দরকার, সেটা আমরা করছি। যারা অস্ত্র দেখিয়েছে, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ ঘটনার পর জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তিনি কথা বলেছেন। তাঁদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এগুলো পছন্দ করছেন না। তাই এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।