বালু তোলার ড্রেজিংয়ের পাইপে আগুন

কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজিং বন্ধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষ ড্রেজিং মেশিনের পাইপে আগুন ধরিয়ে দেয়। মানিকনগর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা ১৯ জানুয়ারি। ছবি: ইকবাল হোসেন
কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজিং বন্ধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষ ড্রেজিং মেশিনের পাইপে আগুন ধরিয়ে দেয়। মানিকনগর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা ১৯ জানুয়ারি। ছবি: ইকবাল হোসেন

কেরানীগঞ্জের হযরতপুরে কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে সাত গ্রামের মানুষ ঝাড়ুমিছিল করেছে। বিক্ষোভকারীরা ড্রেজিং পাইপে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জের মানিকনগর এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর তীরে এ ঘটনাটি ঘটে।
কালিগঙ্গা নদী থেকে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের ঢালিকান্দি, মধুরচর, জগন্নাথপুর, আসামদীপুর, হোগলাকান্দি, পশ্চিম ঢালিকান্দি ও মানিকনগর গ্রামের কয়েক শ নারী-পুরুষ ঝাড়ু-মিছিল বের করে নদীতে ড্রেজিং বন্ধের দাবি জানান। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন কালিগঙ্গা নদীর তীরে ড্রেজিংয়ের পাইপে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী সাত গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, নদী থেকে ড্রেজিংয়ে মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় দুই তীর ভেঙে যাচ্ছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়িঘর। নদীতে ড্রেজিং বন্ধ করার জন্য কয়েক জায়গায় ধরনা দিলেও ড্রেজিং বন্ধ করা হচ্ছে না। এতে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তারা আন্দেলনে নেমেছে।
ঢালিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, ‘দুই থেকে তিন বছর ধরে দফায় দফায় স্থানীয় প্রভাশালীরা কালিগঙ্গা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করছে। আমাদের নদীর তীরের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’

হযরতপুর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কনা বেগম বলেন, ‘নদী থেকে ক্রমাগত বালু উত্তোলন করায় আমাদের ৩৩ শতাংশ জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাকি যেটুকু জায়গা রয়েছে, এসব জায়গাও যদি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, তবে আমরা যাব কোথায়?’

সাতটি গ্রামের মানুষ ঝাড়ুমিছিল বের করে। ছবি: প্রথম আলো
সাতটি গ্রামের মানুষ ঝাড়ুমিছিল বের করে। ছবি: প্রথম আলো

হযরতপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা ওই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করায় তীরের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঝে কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার ড্রেজিং শুরু হয়েছে। আমাদের গ্রামবাসীদের স্বার্থে অতিদ্রুত নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ করা দরকার।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানিকনগর এলাকার কয়েকজন বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল সরকারি অনুমতি না নিয়েই কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজিং বসিয়ে বালু উত্তোলন করে। বছরখানেক আগে বালু তোলার ফলে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর এখন সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নদীতে নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ড্রেজিং করা হচ্ছে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নদীর তীরের গ্রামবাসীরা এটা মানতে নারাজ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী আ স ম মাসরেকুল আরেফিন বলেন, কেরানীগঞ্জের তুলশীখালী সেতু থেকে মানিকগঞ্জের ঝামসা সেতু এলাকা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে নৌযান চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নাব্যতা নেই। তাই সরকার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে নাব্যতা সৃষ্টি করছে। পরিকল্পিতভাবে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর তীর ভাঙবে না। কিন্তু স্থানীয় লোকজন অতীতের অভিজ্ঞতার কারণে ভুল বুঝে তারা আন্দোলন করছে। তিনি আরও বলেন, দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ এ কাজ পেয়েছে। নদীতে নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ড্রেজিং করা হচ্ছে।

মিছিলে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধ কয়েকজন নারী। ছবি: প্রথম আলো
মিছিলে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধ কয়েকজন নারী। ছবি: প্রথম আলো

বসুন্ধরা গ্রুপের ড্রেজিং প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুল মনির সাংবাদিকদের বলেন, কেরানীগঞ্জের তুলশীখালী সেতু থেকে মানিকগঞ্জের ঝামসা সেতু এলাকা পর্যন্ত নদীর নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ থেকে তাঁরা ড্রেজিং কাজের অনুমোদন পেয়েছেন। কিন্তু লোকজন ভুল বুঝে তাদের ড্রেজিংয়ের পাইপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ড্রেজিং বন্ধের দাবিতে স্থানীয় ব্যক্তিরা বিক্ষোভ করে ড্রেজিংয়ের পাইপে আগুন দিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।