নিখোঁজ সজীবের পথ চেয়ে আছেন স্বজনেরা

উত্তর চীন সাগরে জাহাজে বিস্ফোরণে নিহত সজীব আলী মৃধা। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে
উত্তর চীন সাগরে জাহাজে বিস্ফোরণে নিহত সজীব আলী মৃধা। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

বাবার ইচ্ছা ছিল চাকরি শেষ হলে গ্রামের বাড়ি গিয়ে বসবাস করার। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। ছোট বোনকে বড় আয়োজন করে বিয়ে দেওয়ারও ইচ্ছা ছিল তাঁর।

এখন এসব ইচ্ছা মিলিয়ে গেছে, সেই যুবকটির মতো। যুবকটি, অর্থাৎ সজীব আলী মৃধা উত্তর চীন সাগরে জাহাজ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। তিনি এখনো নিখোঁজ। নানা স্বপ্নের স্মৃতি নিয়ে সজীবের পথচেয়ে অপেক্ষায় আছেন পরিবারের স্বজনেরা।

সজীবের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের মতিয়াগাছি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল মাজেদ মৃধা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সজীব মেজ। বড় বোন জিনিয়া আক্তার বিবাহিত। ছোট বোন সাবনাজ আক্তার প্রকৌশলবিদ্যার শিক্ষার্থী।

সজীবের দুলাভাই জাকির হোসেন বলেন, পরিবারের সঙ্গে সজীব পার্বতীপুরে থাকতেন। মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলে সজীব। ২০০৮ সালে পার্বতীপুর জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে জামালপুর এস কে ইঞ্জিনিয়ারিং এজেন্সির মাধ্যমে ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাংকার কোম্পানির (এনআইটসি) সাচি জাহাজে থার্ড মেট (বাণিজ্যিক জাহাজের চতুর্থ শীর্ষ কর্মকর্তা) হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের ১৭ নভেম্বর তিনি সাচি জাহাজের কাজে যোগ দেন।

সজীবের চাচা ওয়াজেদ আলী মৃধা বলেন, নতুন চাকরিতে সজীবের বেতন ছিল প্রায় লাখ টাকা। সজীব বলেছিলেন, তাঁর বাবার চাকরি শেষ হলে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করার স্বপ্ন ছিল। বাবাকে চিকিৎসা করিয়ে ভালো করে তুলবেন। খুব সুখের সংসার ছিল তাঁদের।

সজীবের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওয়াজেদ আলী মৃধা।

সজীবের স্বজনেরা বলেন, তাঁর বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন সজীবের মা। ছোট বোনও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে সজীবের বাবা ও বোনের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে লাশ শনাক্ত করার জন্য।

আজ শুক্রবার সকালে দেখা যায়, এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়িতে সবাই শোকে পাথর হয়ে আছে। কেউ কারও সঙ্গে তেমন কথা বলছে না। সবার চোখেমুখে শোকের ছায়া।
৬ জানুয়ারি রাতে উত্তর চীন সাগরে বিস্ফোরণে ডুবে যায় ইরানের তেলবাহী জাহাজ সাচি। এতে ৩২ জন ক্রু নিখোঁজ হন। নিখোঁজদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন সজীব মৃধা। অন্যজন হারুন অর রশিদ, তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে।