ফরিদপুরের আ.লীগের একাধিক সংঘর্ষ

ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাল, সড়কি ও বল্লম নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। ছবি: প্রথম আলো
ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাল, সড়কি ও বল্লম নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দুটি জায়গায় তিন দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর এবং আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ পাঁচটি কাঁদানে গ্যাস ও ৮৮টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ও আজ শনিবার সকালে উপজেলার মাঝারদিয়ার ইউনিয়নের মাঝারদিয়া ও কুমারপট্টি গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া একই উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুটি জায়গাতেই পুলিশ গুলি চালায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান ওরফে হামেদের সঙ্গে দলের উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম মোল্লার মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সম্পর্কে হাবিবুর ও সেলিম যথাক্রমে তাওই ও পুত্রা।
পুলিশ জানায় এই বিরোধের জের ধরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হাবিবুরের কয়েকজন সমর্থক মাঝারদিয়া বাজারে গেলে তাঁদের ধাওয়া দেন সেলিমের সমর্থকেরা। পরবর্তী সময় দুই পক্ষের সহস্রাধিক সমর্থক লাঠি, ঢাল, সড়কি, বল্লম, ইটসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের ১১টি বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই এলাকায় কয়েকটি খড়ের পালায় আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১১ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শটগানের ৬১টি গুলি ছুড়ে রাত আনুমানিক নয়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শুক্রবার রাতের সংঘর্ষের জের ধরে আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুই পক্ষের প্রায় দেড় হাজার সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২৯ জন আহত হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের পাঁচটি শেল ছুড়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগরকান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এম এম মহিউদ্দিন বলেন, মাঝারদিয়াতে শুক্রবার রাতে ও শনিবার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষ ঠেকাতে শটগানের ৬১টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের পাঁচটি শেল ফাটাতে হয়। এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাল, সড়কি ও বল্লম নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। সংর্ঘ থামাতে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ছবি: প্রথম আলো
ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাল, সড়কি ও বল্লম নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। সংর্ঘ থামাতে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় একই উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সমর্থক ইউপি সদস্য শাহনূর বিশ্বাস ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল বিশ্বাসের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২৬ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ১১টি বসতঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে ২৭টি গুলি ছুড়তে হয়েছে।
উপজেলার দুটি জায়গায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের এ ঘটনাকে ‘দলের মধ্যে ঢুকে পড়া বহিরাগতদের কারসাজি’ বলে মনে করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।
আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহিরাগতরা আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে দলের মধ্যে এসব বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’