আ.লীগ 'এখনই' চায়, বিএনপির 'না'

ওবায়দুল কাদের ও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা
ওবায়দুল কাদের ও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা

একাদশ জাতীয় নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে রূপরেখা দেবে বিএনপি। রূপরেখায় কী থাকবে, কিংবা রূপরেখাটি কী হবে—তা জানতে চায় আওয়ামী লীগ। যদিও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা দেওয়ার সময় এখনো হয়নি বলে মনে করে বিএনপি। ‘উপযুক্ত’ সময়ে রূপরেখা দেবে তারা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়টি নিয়ে দলটি রূপরেখা দিয়ে সহায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া জানাবে বলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জানিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণার সময় খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনের রূপরেখা দেওয়ার কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির নির্বাচনকালীন রূপরেখা কী হবে, সে বিষয়টি বিএনপির কাছে জানতে চান। ১৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো রূপরেখা নিয়ে বিএনপি কোনো কথা বলেনি। বিএনপি অন্তত সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে, এটা আওয়ামী লীগ আশা করেছিল। আসলে বিএনপি সহায়ক চায়, নাকি নির্বাচনকালীন সরকার চায়? তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আজকে জাতি জানতে চায়, বিএনপি কোনটা চায়? তত্ত্বাবধায়ক, সহায়ক নাকি নির্বাচনকালীন সরকার? নির্দিষ্ট করে না বলে বারবার জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় এখানে নেই।’

চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা আছে। এরও আগে অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। সরকারের এই মেয়াদের শেষ অধিবেশনও ৩০ অক্টোবরের আগে হতে হবে। এরপর আর অধিবেশন বসবে না। বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের মূল কথা হলো সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এবং ওই সরকারের প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। ফলে বিএনপির দাবি মানতে হলে সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে। আর তা করতে হলে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবরের আগেই করতে হবে। অর্থাৎ রূপরেখা দিতে বিএনপির হাতে এখনো ৯ মাস সময় আছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘যথা সময়ে’ রূপরেখা দেবে তাঁর দল।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এত কিছু বোঝেন, কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে—এ বিষয়টি বোঝেন না? প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন। বিএনপি মনে করে রূপরেখা ঘোষণার সময় এখন না। সময় হলে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। 

এর আগে বিএনপির নেতারা জানিয়েছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বা সহায়ক সরকারের বিষয়ে বিএনপি বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে একটি খসড়া তৈরি করে রেখেছে। খসড়ায় নির্বাচনের সময় প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসি যেন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি, অপসারণ কিংবা নিয়োগ প্রদান করতে পারে, এ জন্য বিএনপি বিষয়গুলো ইসির অধীনে নেওয়ার কথা বলবে। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিচারিক ক্ষমতাসহ সারা দেশে সেনা মোতায়েনের বিষয়ও আছে খসড়ায়।

নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অনেক আগেই বলেছেন তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন। সেই রূপরেখা উপযুক্ত সময়ে দেওয়া হবে। রূপরেখার বিষয়টি একটি কৌশলের বিষয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ ঘোষণার সময়, নির্বাচন কমিশন কেমন হবে—সে সময়ও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার কথা বলেছেন। এটি কৌশলের ব্যাপার। উপযুক্ত সময়ে রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।’

বিএনপির রূপরেখা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপির আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে, জনগণের কাছে সরকারকে বিতর্কিত করতে বিএনপি এসব কথা বলছে। বর্তমান সরকার নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এ জন্য সহায়ক সরকারের কোনো প্রয়োজন নেই বলে তাঁরা মনে করছেন।

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্যের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা একমত নন। তাঁরা বলছেন, বর্তমান সরকারের দুই আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনে সরকার তার নিরপেক্ষ অবস্থান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সরকারের ‘আজ্ঞাবাহী’ হিসেবে কাজ করছে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সহায়ক সরকারের বিকল্প দেখছেন বিএনপির এই নেতারা।