রোহিঙ্গা সংকট জটিল হচ্ছে, আরও সহায়তা দরকার

রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত জটিল হচ্ছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এই পরিস্থিতিতে সংস্থাটি বলেছে, জরুরি ভিত্তিতে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের আরও সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার। বিশ্বব্যাংক গতকাল শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার (আজ) ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরবেন।

এ সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি জানান, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ ও মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত জনগণের সহায়তায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আছে।

বন উজাড় করে পাহাড়ি এলাকায় প্লাস্টিক আর বাঁশ দিয়ে তৈরি অসংখ্য শিবির দেখার কথা উল্লেখ করে অ্যানেট ডিক্সন বলেন, ‘এটি অবকাঠামো এবং সেবার পাশাপাশি পানিসম্পদ আর পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বর্ষা মৌসুম এগিয়ে এলে রোগব্যাধি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিও বাড়বে।’

অ্যানেট ডিক্সনের মতে, শুরুতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় দেশের এবং বিদেশের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং উন্নয়ন অংশীদারেরা এগিয়ে এসেছে। এতে হাজার হাজার জীবন রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, তবে এখন আরও ব্যাপকতর সাহায্যের প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার চাইলে স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বিশ্বব্যাংক আরও তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এটি হলে রোহিঙ্গারা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন উপকৃত হবেন।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার। রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নি পুর বরাত দিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় দৈনিক দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার গতকাল এ খবর জানায়। রাখাইনের মংডু শহরতলির তং পিউ লেটওয়ে এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় নি পুর একটি ছবি ছেপেছে পত্রিকাটি। এতে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রের আশপাশটা কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা। তিনি এ সময় মংডুর গাখুয়া এবং লা ফুয়ে খাউং শিবিরও ঘুরে দেখেন। আশ্রয়কেন্দ্রের শেষ পর্বের কাজ বিশেষ করে আবাসনের পাশাপাশি সেখানকার চিকিৎসাকেন্দ্র ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার কাজের খোঁজ নেন।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় দৈনিকটি বলছে, ২৩ জানুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। স্থলসীমান্ত হয়ে রাখাইনে আসা রোহিঙ্গাদের রাখা হবে তং পিউ লেটওয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। আর গাখুয়া অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হবে নৌপথে আসা রোহিঙ্গাদের।

এদিকে রাখাইনের উগ্রপন্থী সংগঠন আরসা বলছে, রাখাইনের মুসলমানদের দীর্ঘস্থায়ী শিবিরে আটকে ফেলতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তিটি করা হয়েছে। গতকাল টুইটারে এক বিবৃতিতে আরসা বলেছে, রোহিঙ্গাদের তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে পুনরায় আশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে ‘তথাকথিত অস্থায়ী শিবিরে’ রাখার মাধ্যমে আটকে ফেলতে প্রতারণামূলক চুক্তিটি করেছে মিয়ানমার।