সাগরছোঁয়া চরে নান্দনিক স্থাপনা

ভোলার চরফ্যাশনের ‘জ্যাকব টাওয়ার’ এলাকার চেহারাই বদলে দিয়েছে। ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির এই টাওয়ার উদ্বোধনের কথা। সম্প্রতি তোলা l ছবি: প্রথম আলো
ভোলার চরফ্যাশনের ‘জ্যাকব টাওয়ার’ এলাকার চেহারাই বদলে দিয়েছে। ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির এই টাওয়ার উদ্বোধনের কথা। সম্প্রতি তোলা l ছবি: প্রথম আলো

দেশের একেবারে প্রান্তবর্তী সমুদ্র ছুঁইছুঁই এলাকায় এমন একটি স্থাপনার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু গর্ব করার মতো অনেক স্থাপনাই এখন দেশে হচ্ছে। ভোলার চরফ্যাশনের ‘জ্যাকব টাওয়ার’ তার অন্যতম নিদর্শন। অত্যাধুনিক স্থাপত্যকলার নান্দনিক বৈভব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ২২৫ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটির দিকে তাকালে বিস্ময় জাগে মনে।

সন্ধ্যার পর টাওয়ারটি হরেক রঙের আলোয় রঙিন হয়ে ওঠে। আর তার রোশনাই ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। সামনের বিশাল সুইমিংপুলের স্বচ্ছ নীলাভ পানিতে রঙিন প্রতিচ্ছবি পড়ে টাওয়ারটির। শত শত মানুষ সেখানে এসে ভিড় করেন। তাঁদের কেউ একাকী, কেউ দলবদ্ধভাবে সেলফি তোলেন। কেউ আবার চেষ্টা করেন পানিতে পড়া প্রতিচ্ছবিসমেত টাওয়ারের ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে। সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি জ্যাকব টাওয়ার–সংলগ্ন ফ্যাশন স্কয়ার এলাকাটি জমজমাট থাকে।

কথা হলো চরফ্যাশন সরকারি কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক মনির আহমেদের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘চরফ্যাশনের মতো প্রান্তিক এলাকায় এমন একটি স্থাপনা আমাদের কাছে বিস্ময়করই মনে হয়। এই টাওয়ার দিনে যেমন সুন্দর, রাতেও তেমনি আকর্ষণীয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই টাওয়ার দেখতে আসছেন। আশপাশে অনেক মানসম্মত হোটেল হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, এলাকার পরিচিতি—সবই বেড়েছে। এই টাওয়ার এখন ভোলাবাসীর গৌরব।’

চরফ্যাশন উপজেলার ফ্যাশন স্কয়ার নামের এই এলাকার চেহারাই এখন বদলে গেছে। পৌরসভার এই জায়গায় একসময় ছিল একটি মজাপুকুর, আবর্জনা ফেলার স্থান, বস্তি। মাদকসেবীদের আড্ডা বসত। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে সুউচ্চ টাওয়ার, শিশুপার্ক আর সারিবদ্ধ বিপণিবিতান।

এর সামনে রয়েছে সুইমিংপুল। প্রশস্ত খোলা চত্বর। তারপর বিনোদন পার্ক। এতে আছে মজার মজার রাইড। পার্কের ভেতরে রয়েছে চারদিকে পাড় বাঁধানো পুকুর। পুরো স্থাপনার চারপাশ ঘিরে রয়েছে নকশা করা ইট বিছানো পায়ে হাঁটার পথ। সকাল-সন্ধ্যায় এলাকার স্বাস্থ্যসচেতন বহু নারী-পুরুষ এখন এই পথ ধরে হাঁটাহাঁটি করেন।

সাদা মার্বেল পাথর বিছানো বৃত্তাকার একটি বেদির ওপর তিন দিক থেকে তিনটি ধনুকের মতো বাঁকা স্তম্ভ উঠে গেছে। মাটির ৭৫ ফুট নিচে থেকে এই স্তম্ভগুলো ঢালাই করে তোলা হয়েছে। তার মাথার ওপর গম্বুজসদৃশ নীল কাচে ঢাকা বৃত্ত। এর কাঠামো করা হয়েছে ইস্পাতের ফলক দিয়ে। বৃত্তের চূড়া ক্রমশ সুচের মতো সরু হয়ে উঠে গেছে। এই টাওয়ার ১৮ তলাবিশিষ্ট, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। প্রতি তলায় রেলিং ঘেরা বারান্দার মতো তিনটি মেঝে। সবার ওপরের বৃত্তের অংশে দাঁড়ালে পুরো চরফ্যাশনের সবুজ নিসর্গশোভিত দিগন্তরেখা দেখা যায় পাখির চোখে। এখানে একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্রও রাখা আছে। দর্শকেরা সেখান থেকে আরও বহু দূরে মেঘনার মোহনা এবং বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা শ্বাসমূলীয় বনায়নশোভিত চরগুলোও দেখতে পাবেন।

চরফ্যাশন পৌরসভার এই টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। ২০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা হলেন স্থানীয় সাংসদ এবং পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। গত বছর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নির্মাণাধীন প্রকল্পটি পরিদর্শন করে এর নামকরণ করেন ‘জ্যাকব টাওয়ার’।

এই টাওয়ার নির্মাণ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চরফ্যাশন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দ্বীপ জেলা ভোলার সর্বদক্ষিণে এই উপজেলার চরকুকরি–মুকরিসহ বঙ্গোপসাগর থেকে জেগে ওঠা চরগুলোর পর্যটনের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।

২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের এই টাওয়ার ও বিনোদনকেন্দ্র উদ্বোধনের কথা। এরপর থেকেই সর্বসাধারণের জন্য টাওয়ার ও বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হবে। স্বচ্ছ আবরণের ক্যাপসুল লিফটে একসঙ্গে ১৩ জন টাওয়ারের চূড়ায় উঠতে পারবেন। দেখতে পারবেন চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।