পদ ছাড়া পদোন্নতির দেশ বাংলাদেশ

একক বক্তৃতায় আকবর আলি খান l ছবি: প্রথম আলো
একক বক্তৃতায় আকবর আলি খান l ছবি: প্রথম আলো

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আকবর আলি খান বলেছেন, রাজনৈতিকীকরণের ফলে দেশের প্রশাসন প্রায় ভেঙে পড়েছে। আর এটা করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো। এক দল আরেক দলের চেয়ে এটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের বর্তমান সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় আকবর আলি খান এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে এই বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে বক্তৃতা এবং তা নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব। বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকেরা এতে অংশ নেন।

প্রশাসনে কারা রাজনৈতিকীকরণ করছে, তার ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করছে। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় যায় তখন তারা বলে, আগের তারা (সরকার) যদি এটা করে থাকতে পারে, তাহলে তারা কেন এটা করতে পারবে না। সুতরাং এক দল আরেক দলের চেয়ে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিতে নিতে এখন যে পর্যায়ে চলে এসেছে, তাতে আমলাতন্ত্রের কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

এসব সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন আকবর আলি খান। তিনি বলেন, সমস্যার সমাধান অবশ্যই রাজনীতিবিদদের করতে হবে। রাজনীতিবিদেরা সেই সমস্যা সমাধান তখনই করবেন, যখন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের কাছে কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয়। আর জবাবদিহি যখন প্রতিষ্ঠা হবে, তখন রাজনীতিবিদেরা বিষয়টির প্রতি মনোযোগী হবেন। দেশে যেহেতু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, তাই কোনো রাজনৈতিক দলের প্রশাসন সম্পর্কে কোনো কর্মসূচি নেই, যেটাকে প্রকৃতপক্ষে সমস্যা সমাধানের কর্মসূচি বলা যাবে।

নিয়োগে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন আকবর আলি খান। নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ২৫৭ ধরনের কোটা ব্যবস্থা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের উদ্ভট কোটা ব্যবস্থা নেই। কোটা ব্যবস্থাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দেওয়া উচিত। কোনো দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোটা ব্যবস্থা চলতে পারে না।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার যৌক্তিকতা থাকলেও এখন তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আকবর আলি খান।

পদ ছাড়া পদোন্নতির সমালোচনা করে আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে পদ ছাড়া পদোন্নতি হয়।

আবার এই পদোন্নতিতে রাজনৈতিকীকরণের প্রসঙ্গও উঠে আসে আকবর আলি খানের কথায়। তিনি বলেন, সরকারের ‘গুডবুকে’ থাকলে পদোন্নতি পাবেন, না থাকলে পাবেন না। আবার এ ব্যাপারে কিছু করার স্বাধীনতাও নেই। পদোন্নতির পর আবার পদের জন্যও তদবির করতে হয়।

আগে চার ধাপে ফাইলের সিদ্ধান্ত হতো উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, এখন আট ধাপে সিদ্ধান্ত হয়। আর কোনো মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী থাকলে সেখানে নয় ধাপে সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ ও বিচারব্যবস্থারও সংস্কার প্রয়োজন।

আকবর আলি খান বক্তৃতায় বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র নিয়ে তাঁর লেখা গ্রেশামস ল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড, অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য বাংলাদেশ ব্যুরোক্রেসি বইয়ের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, প্রভাষক আরিফুর রহমান ভূঁইয়া।