চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায় নেপাল

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করতে চায় নেপাল। দেশটি মনে করে, এতে শুধু নেপাল নয়, দুই দেশই উপকৃত হবে। এ জন্য রেল ও সড়ক অবকাঠামো উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন নেপালের ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকেরা। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার দুদিন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় সভায় এই আগ্রহের কথা জানান তাঁরা।

বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত চোপ লাল ভুসালের নেতৃত্বে সফররত নেপালের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকেরা। গতকাল সকালে নেপালের ২৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল চট্ট­গ্রাম বন্দর ভবনের সম্মেলনকক্ষে বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। এ সময় বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ, পর্ষদ সদস্য জাফর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বন্দর সূত্র জানায়, মতবিনিময় সভায় নেপালের রাষ্ট্রদূত চোপ লাল ভুসাল বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে নেপাল থেকে এলাচ, আদাসহ মসলাজাতীয় পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য নেপাল থেকে পণ্য এনে গুদামজাতকরণের সুবিধা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ সময় বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, নেপালের পণ্য রপ্তানির জন্য নতুন করে গুদামজাতকরণ সুবিধার দরকার হবে না। কারণ, নেপাল থেকে ট্রাকে বা কাভার্ড ভ্যানে পণ্য সরাসরি ঢাকার কমলাপুরে কনটেইনার ডিপোতে এনে রাখা যাবে। এরপর এই ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে রেলপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশগামী জাহাজে তুলে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বন্দর দিয়ে যেহেতু সিংহভাগ কনটেইনার খালি যায়, সে জন্য নেপালের রপ্তানি পণ্যের জন্য বন্দরের ওপর চাপও খুব বেশি পড়বে না।

মতবিনিময়ের সময় নেপালের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল জানায়, বর্তমানে তারা ভারতের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। ভারতের বিশাখাপট্টনম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি শুরু করেছিলেন নেপালের ব্যবসায়ীরা। তবে তাতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে।

মতবিনিময় শেষে নেপালের প্রতিনিধিদল বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ড ঘুরে দেখে। এই প্রতিনিধিদলে নেপালের এলাচ, আদাসহ মসলা রপ্তানিকারকেরা রয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়

এর আগে গত শুক্রবার রাতে নগরের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে ‘নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়। ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত চোপ লাল ভুসাল, ট্রেড সার্ভিস ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক, নেপালের উপরাষ্ট্রদূত ধন বাহাদুর ওলি প্রমুখ।

চোপ লাল ভুসাল বলেন, বাংলাদেশ নেপাল থেকে গ্রিন এনার্জি হিসেবে জলবিদ্যুৎ সুবিধা নিতে পারে। নেপালে কারিগরিভাবেই এক লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এ জন্য নেপাল বিদ্যুৎ খাতে বড় বিনিয়োগ চায়। তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য ও ট্রানজিট সুবিধা ছিল। সেটা ১৯৮২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। নেপাল ট্রানজিট সুবিধা পুনরায় চালু করতে চায়।

ধন বাহাদুর ওলি বলেন, নেপালের পণ্য তৃতীয় দেশে রপ্তানির কেন্দ্রস্থল হতে পারে চট্টগ্রাম।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, নেপালের সঙ্গে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিন দশক ধরে এ নিয়ে কথা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।