যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচতে...

২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থেকে হাত-পা-মস্তকবিহীন একটি লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ১৭ জানুয়ারি উদ্ধার করা হয় একটি বিচ্ছিন্ন মস্তক। তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে, বিচ্ছিন্ন মস্তক ও দেহ মফিজুর রহমান (৫২) নামের এক গ্রাম্য কবিরাজের। পুলিশ বলছে, মফিজুরের যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচতে এক নারী তাঁর দেবরসহ দুই আত্মীয়র সহায়তায় তাঁকে খুন করিয়েছেন। এই ঘটনায় ওই নারী (৩৮) ও তাঁর ওই দুই আত্মীয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলীতে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান।

নিহত মফিজুর রহমানের (৫২) বাড়ি সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের কাছাইলচর এলাকায়। তিনি কবিরাজির পাশাপাশি সোনার দোকানে গয়না তৈরির কাজ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাঈদুর রহমান বলেন, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত শুরু করে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে তারা নিহত ব্যক্তির পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের এক গৃহবধূর পরিকল্পনায় মফিজ কবিরাজ খুন হন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

ডিবির ভাষ্যমতে, কেরানীগঞ্জের এক প্রবাসীর স্ত্রী সাভারের বটতলা এলাকার মফিজ কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। সে সময় কবিরাজ ফাঁদে ফেলে তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে ওই নারী সম্পর্ক রাখতে না চাইলে কবিরাজ তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। কবিরাজ ওই গৃহবধূকে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য করেন। এতে ওই নারী অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর দেবরসহ দুই আত্মীয়কে ঘটনাটি জানান। পরে ওই তিনজন মিলে কবিরাজ মফিজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে ওই নারী মুঠোফোনে কবিরাজ মফিজকে তাঁর কেরানীগঞ্জের বাসায় আসতে বলেন। তাঁর কথামতো কবিরাজ সাভার থেকে কেরানীগঞ্জে আসেন। রাত ১১টার দিকে ওই নারী খাবারের সঙ্গে কবিরাজ মফিজকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে দেন। এতে কবিরাজ অচেতন হয়ে পড়লে ওই নারী ও তাঁর দেবর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মফিজকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে গুম করার উদ্দেশ্যে লাশটি চাপাতি ও ছুরি দিয়ে ১০ টুকরা করেন। এরপর খণ্ডিত অংশগুলো কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে বেউতা বিল ও নিমতলী সেতুর নিচে ফেলে দেন।

ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁরা ঢাকার আশপাশের থানাগুলোতে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন সাভার থানার ভাকুর্তা এলাকার মফিজ নামের এক কবিরাজ নিখোঁজ হয়েছেন। এই ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তির বড় ভাই ১ জানুয়ারি সাভার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই জিডির সূত্র ধরে তাঁরা তদন্ত শুরু করেন। নিহত ব্যক্তির মুঠোফোনের কললিস্ট থেকে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রামানন্দ সরকার, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের, ডিবির পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান।