রুবি ভিলায় নিহতদের একজন শেরপুরের রবিন

মো. রবিন মিয়া
মো. রবিন মিয়া

ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযানে নিহত ব্যক্তিদের একজন শেরপুরের নকলা উপজেলার মো. রবিন মিয়া (১৭)। রবিন নকলা পৌর শহরের কুর্শাবাদাগৈড় গ্রামের মৃত ফজর উদ্দিনের ছোট ছেলে।

রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা লাশটি শনাক্ত করেছেন। আজ রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে তিনি তাঁর ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে রবিনের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রবিনের লাশ তাঁর কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে তিনি জানান।

রবিনের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রবিন কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না।

১২ জানুয়ারি রুবি ভিলার পঞ্চমতলায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযানে রবিনসহ তিনজন নিহত হন। এর আগে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার র‌্যাবের পক্ষ থেকে অপর দুজনের ছবি প্রকাশ করা হয়। গত শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তা দেখে রবিনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা ও ভগ্নিপতি মো. আল আমিন রোববার সকালে ঢাকায় র‌্যাব কার্যালয়ে যান। পরে হাসপাতালের হিমঘরে রাখা লাশ দেখে তাঁরা রবিনকে শনাক্ত করেন।

আজ দুপুরে নকলা পৌর শহরের কুর্শাবাদাগৈড় এলাকায় অবস্থিত রবিনদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, তার মা মালেকা খাতুন (৫৫) ঘরের বারান্দায় শুয়ে উচ্চ স্বরে কাঁদছেন। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িটিতে ভিড় করে আছেন।

মালেকা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ৭ জানুয়ারি দুপুরে তাঁর ছেলে রবিন ভাত খেয়ে দোকানের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার জানতে পারেন, রবিন মারা গেছে। মালেকা বেগম দাবি করেন, রবিন কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না। দিনের বেশির ভাগ সময়ই রবিন তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফার চালের দোকানে কাজ করত। কাজের চাপে অনেক সময় ভাত খাওয়ারও সময় পেত না।

রবিনের প্রতিবেশী কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার রুহুল আমিনের স্ত্রী রাজেনা বেগম বলেন, ‘কেন সে এভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল আর মারা গেল আমরা বুঝতে পারছি না।’

রবিনের ভাই গোলাম মোস্তফার স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, ‘রবিনরা তিন ভাই ও এক বোন। রবিন ছিল সবার ছোট। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। প্রায় ১৩ বছর আগে রবিনের বাবা মারা যান। তাঁর (লাকি) স্বামী নকলা বাজারে চালের ব্যবসা করেন। রবিন বড় ভাইয়ের সঙ্গে দোকানেই কাজ করত। ৭ জানুয়ারি হঠাৎ করে সে (রবিন) বাসা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান আবদুল হালিম সিদ্দিকী আজ সন্ধ্যা ছয়টায় প্রথম আলোকে বলেন, রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা শনিবার তাঁর ভাইয়ের নিখোঁজের ব্যাপারে নকলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ভাইয়ের সন্ধানে শনিবার দিবাগত রাতে তিনি ঢাকায় রওনা দেন। এখন পর্যন্ত রবিনের লাশ শনাক্তের বিষয়টি র‌্যাব বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে তাঁকে জানানো হয়নি।