গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, সময় চাইলেন কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করেছেন দলটির উপকমিটিতে সহসম্পাদক পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। আজ রোববার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তিন মাসের সময় চান কাদের।

ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবারও এই নেতাদের তোপের মুখে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওবায়দুল কাদের তাঁর গাড়িতে করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন দলের উপকমিটিতে পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদকের গাড়ি দেখেই তা ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতারা নানা ধরনের স্লোগানও দিতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে আগে থেকে অবস্থান করা কেন্দ্রীয় নেতারা বাইরে আসেন। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপরও বিক্ষুব্ধ নেতারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক পদে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের মূল্যায়ন না করে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদলের লোকজনকে পদ দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, রাত আটটার দিকে ওবায়দুল কাদের বিক্ষুব্ধ নেতাদের নিয়ে কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কাদের একেকজন করে নেতাকে কথা বলতে বলেন। তখন বিক্ষুব্ধ নেতাদের পক্ষে কয়েকজন তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, বড় নেতাদের বাসায় কাজ করেও কেউ কেউ উপকমিটিতে পদ পেয়েছেন। কেউ কেউ পদ পেয়েছেন মোটরসাইকেল নিয়ে বড় নেতাদের প্রটোকল দিয়ে। ছাত্রলীগের নতুন নেতারাও পদ পেয়েছেন। এমনকি বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদলের লোকজনকে পদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে সেখানে থাকা বিক্ষুব্ধ নেতারা হইহুল্লোড় শুরু করেন। তাঁদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ আমি সচিবালয়েও সাংবাদিকদের বলেছি, যে কমিটি গঠনই হয়নি, সেটা কীভাবে বাতিল বা স্থগিত হবে? ওই উপকমিটির জন্য নামের তালিকার একটি খসড়া আছে। সেটা যাচাই-বাছাই করা হবে।’ এ সময় আবার বিক্ষুব্ধ নেতারা হইহুল্লোড় করতে থাকলে কাদের বলেন, মূল খসড়া থেকে যাচাই-বাছাই করা হবে। তখন কেউ যুক্ত হতে পারে, আবার কেউ বাদও পড়তে পারে। এ সময় কাদের এই উপকমিটি করার জন্য তিন মাসের সময় চান। তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি পর্যালোচনা করে নেত্রীর অনুমোদনক্রমে সুরাহা করা হবে। পরে নেতা-কর্মীরা শান্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন।

দলের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে প্রতিটি জেলায় উপকমিটি করার কথা আছে। সে অনুযায়ী উপকমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে একটি খসড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে নাম না থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরাই দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে দলীয় কার্যালয়ে আসেন। সাধারণ সম্পাদক তাঁদের কথা শুনেছেন। উপকমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে; খসড়া যাচাই-বাছাই হবে। কাজ শেষ হলে দলীয় সভানেত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে এর ঘোষণা দেবেন সাধারণ সম্পাদক।

গতকাল একই বিষয়ে বিক্ষোভের সময় ওই কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সহসম্পাদকের এই উপকমিটি দেওয়া হয়নি। তবু বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ বিষয়টি জেনে গেছে। বর্তমানে এই উপকমিটি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর উপকমিটির সহসম্পাদক পদে কমিটি দেওয়া হবে।

এর আগে আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল তিনি কারও তোপের মুখে পড়েননি। ওই নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছিলেন। গণমাধ্যমে বিষয়টি অন্যভাবে এসেছে।