৫১ দিন ধরে উপাচার্য নেই, স্থবির কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ফাইল ছবি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ফাইল ছবি।

উপাচার্যের পদ শূন্য থাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আটকে আছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এখনো প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন অনুষদের ডিন নিয়োগও বন্ধ রয়েছে। ছুটি নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষকদের। নতুন করে কোনো প্রকল্পও নেওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের বৈঠকও হচ্ছে না পাঁচ মাস। দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিনটি পদই খালি। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৫১ দিন ধরে উপাচার্যের পদটি শূন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে পদটি শূন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদও শূন্য, যে কারণে ভারপ্রাপ্ত কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনেরও কেউ নেই। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮০ জন শিক্ষক, ৬৬ জন কর্মকর্তা ও ১৮৮ জন কর্মচারীসহ মোট ৩৩৪ জন ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পাননি। নিয়মানুযায়ী, উপাচার্যের অনুমোদন নিয়ে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, উপাচার্য না থাকায় শিক্ষকদের ছুটি পেতে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামানকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য এবং মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসানকে সন্তানের চিকিত্সার জন্য ছুটি নিতে হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এ ছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, কলা ও মানবিক অনুষদে কোনো ডিন নেই। নতুন করে বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা এবং পরীক্ষার অনুমোদনও করা যাচ্ছে না। ফল প্রকাশেও সমস্যা হচ্ছে। তিন মাস পর সিন্ডিকেটের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত পাঁচ মাসে কোনো সভা হয়নি।

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ৯৭ আসনের বিপরীতে ৫৪ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। তিনটি অনুষদে ১৯টি বিভাগে এবারও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। গত ১৭ ও ১৮ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করে। শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের কারণে তত্কালীন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে পারেননি টানা ৪৭ দিন। তার ওপর শিক্ষকদের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট থাকায় ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। তখন কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, নতুন উপাচার্য এলে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এখন উপাচার্যের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. আবু তাহের বলেন, উপাচার্য না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। পদটি পূরণ হলেই সংকট কেটে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতাদি পাননি কেউ। অনেকগুলো কমিটির অনুমোদন হয়নি। ভর্তি পরীক্ষাও আটকে আছে। সরকারের সব মহলই বিষয়টি জানে, কিন্তু উপাচার্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না।