ঢিমেতালে চলছে নেত্রকোনার মগড়া সেতুর কাজ

নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ায় মগড়া নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এক বছর মেয়াদের সেতুটি দুই বছরে মাত্র ৪৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ায় মগড়া নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এক বছর মেয়াদের সেতুটি দুই বছরে মাত্র ৪৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

নির্মাণাধীন সেতুর দুই পাশে বিকল্প পথ তৈরি করতেই কেটে গেছে এক বছর। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে বছরখানেক আগে। কিন্তু সেতু নির্মাণের অগ্রগতি সামান্যই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ঠিকাদারের চরম গাফিলতি এবং সেতুর তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হয়েছে। এ চিত্র নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় মগড়া সেতু প্রকল্পের।

জানতে চাইলে সেতু নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়ক্ষেপণ করায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে এ পর্যন্ত পাঁচবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সেতুর মোট চারটি ভিত্তির মধ্যে দুটি এবং দুই পাশে ৪০টি পাইলের মধ্যে ৩৬টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কাজ এগোচ্ছে।

সওজ বিভাগের নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মগড়া সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য হওয়ার কথা ৭২ দশমিক ৬ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ পায় মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন নামের ময়মনসিংহের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে সেতুর কাজ শুরু করে একই বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে শুধু সেতুর এক পাশে বিকল্প পথ তৈরি করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১০ মাস পর ২০ নভেম্বর অন্য পাশে (পূর্ব দিকে) দ্বিতীয় বিকল্প পথের কাজ শুরু হয়। পুরোনো সেতুটি ভাঙার কাজ শেষ হয় গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর শুরু হয় মূল সেতুর পাইলিং। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ২ মে থেকে সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। এ নিয়ে ৬ মে প্রথম আলোতে ‘আবারও পেছাল মগড়া সেতুর নির্মাণকাজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নদীটির ওপর সেতু নির্মাণের দীর্ঘসূত্রতার জন্য এখন শহরের কয়েক লাখ মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। সওজ কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়েছে।

বর্তমানে মগড়া নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাসখানেক ধরে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু পৌর বাসিন্দাদের শঙ্কা, যেভাবে ঢিমেতালে কাজ চলছে তা শেষ হতে চলতি বছরও চলে যায় কিনা! এদিকে নদীর মাঝে স্টিলের পাটাতন দিয়ে যানবাহনসহ চলাচলের যে দুটি সাময়িক সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল, তা এখন হুমকির মুখে। ভারী যান চলাচলে সেতু দুটি যেকোনো সময় ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া নদীর দুই পাশে তীব্র যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন ৮-১০ জন ট্রাফিক পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হোসাইন আহম্মেদ বলেন, পুরোনো সেতুটিতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের লাইন ছিল। এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে তার বিচ্ছিন্ন করতে সময় লেগেছে। তা ছাড়া বিকল্প পথ ধরা ছিল একটি। কিন্তু জনস্বার্থে করা হয়েছে দুটি। জমি অধিগ্রহণ করতে সময় লেগেছে। তবে এখন দ্রুতগতিতেই কাজ হচ্ছে। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় তিনিও সমস্যায় আছেন বলে জানালেন হোসাইন আহম্মেদ জানালেন।

সওজ নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর কাজ এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে তিন-চার মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। আর বিকল্প এ দুটি পথের পাশে বস্তাভর্তি মাটি, বাঁশ ও কাঠ দেওয়া আছে। সহজে ভাঙবে না।