বাংলা একাডেমি থেকে বাংলাবাজার ব্যস্ততার তুঙ্গে

বাংলা একাডেমিতে চলছে বইমেলার প্রস্তুতি। গতকালের ছবি । প্রথম আলো
বাংলা একাডেমিতে চলছে বইমেলার প্রস্তুতি। গতকালের ছবি । প্রথম আলো

অমর একুশে গ্রন্থমেলার সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। হাতে আছে আর নয়টি দিন। ইতিমধ্যে বাংলা একাডেমির ও উদ্যানের গায়ে বইমেলার গন্ধ লেগে গেছে। চলছে স্টল, প্যাভিলিয়ন, মঞ্চ তৈরির কাজ। মেলার আমেজ লেগেছে নগরীর বাংলাবাজারসহ রাজধানীর নানা জায়গায়। 

আকারে-প্রকারে এবার মেলার পরিসর বড় হচ্ছে। সব মিলে সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বসবে একুশে গ্রন্থমেলা। হবে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন, সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন। প্রতিদিন থাকবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। জমবে লেখক-পাঠকের আড্ডা।

গতকালের হিসাব অনুযায়ী, সব মিলিয়ে এবার ৪৬০টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে। যার মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নেবে অনেকগুলো প্রকাশনা সংস্থা। তবে এ হিসাব বাড়তে বা কমতে পারে।

এবারের মেলায় ৭০০ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা গতবারের চেয়ে বেশি। গতবারের তুলনায় প্যাভিলিয়ন বাড়ছে, নতুন ১২টি প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার মেলা বড় পরিসরে, সাজানো-গোছানো হবে। প্যাভিলিয়নগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা মেলার সৌন্দর্য বাড়াবে। বৈষম্যের শিকার হবে না কেউ। এবার মেলায় প্রবেশের জন্য টিএসসি ও তিন নেতার মাজারসংলগ্ন দুটি প্রবেশপথকে দৃশ্যমান করা হবে।

মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যাচাই-বাছাই করে মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রকাশনা সংস্থাগুলোর নাম চূড়ান্ত করেছি। এবার মেলায় বাংলা একাডেমির ২টিসহ সব মিলিয়ে ২৩টি প্রকাশনা সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

নতুন প্যাভিলিয়ন পাওয়ার তালিকায় এবার রয়েছে গেলবারের আলোচিত প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা। এ ছাড়া রয়েছে ঐতিহ্য, উৎস প্রকাশন, কথা প্রকাশসহ ১২টি প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থা প্রথমবারের মতো প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে। এর বাইরের গতবার বরাদ্দ পাওয়া সংস্থার মধ্যে এবারও ১১টি সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

দ্বিতীয়বারের মতো মেলা সাজানোর দায়িত্ব পাচ্ছে অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ইভেন্টস। রোববার রাতে তিনি বলেন, ‘এবার মেলার নান্দনিক দিকটি নতুনভাবে সাজাবে নিরাপদ। আগের বছরের সব ত্রুটি সংশোধন করে মেলাকে আরও বেশি নান্দনিক করে তোলার পাশাপাশি বেশ কটি প্রতিষ্ঠানের স্পনসর পাচ্ছেন বলে জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। ইতিমধ্যে একটি টাইটেল স্পনসরও ঠিক হয়েছে।

প্রতিবার মেলার উদ্বোধনের দিন থেকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন শুরু হয়। এবার হচ্ছে ব্যতিক্রম। একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আয়োজনে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন শুরু হবে ২২ ফেব্রুয়ারি। তিন দিনের এ সম্মেলন চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের শতাধিক সাহিত্যিক যোগ দেবেন। সম্মেলন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানালেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। 

বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেমন চলছে মেলা আয়োজনের ব্যস্ততা, তেমনি বাংলাবাজার, ফকিরাপুলসহ রাজধানীর ছাপা এবং বাঁধাই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন মেলায় নতুন বই আনার ব্যস্ততা। ছাপাখানার শ্রমিকদের বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত নেই।

বাংলাবাজারের অধুনা প্রিন্টিংয়ে দেখা গেল সব মুদ্রণযন্ত্রই নতুন বই ছাপার কাজে ব্যস্ত।

ছাপাখানাগুলোর পাশাপাশি সমানতালে ব্যস্ত বই বাঁধাই করার প্রতিষ্ঠানগুলোও।