বেহাল সড়কে ঝাঁকুনি ও ধুলার কষ্ট

ডিএনসিসির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের বাদালদি সড়কের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এতে একসময় পিচ ঢালাই ছিল l প্রথম আলো
ডিএনসিসির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের বাদালদি সড়কের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এতে একসময় পিচ ঢালাই ছিল l প্রথম আলো

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নতুন যুক্ত ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান সড়কসহ বেশির ভাগ রাস্তাই বেহাল। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়কে ঝাঁকুনি সয়ে গন্তব্যে যেতে হয় লোকজনকে। এ ছাড়া ভাঙা রাস্তায় ধুলাবালুর যন্ত্রণা তো আছেই। এদিকে ওয়ার্ডটিতে নেই যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এলাকা থেকে সংগ্রহ করা আবর্জনা উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে ফেলার সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

হরিরামপুর ইউনিয়নের কাঠামো ভেঙে ডিএনসিসির ৫২ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হলো বাউনিয়া, বাদালদি, উলুদাহা, চান্দুরা-মান্দুরা, শোলাটি, দলিপাড়া আংশিক, আহালিয়া, পাকুরিয়া ও বাইলজুরি। ওয়ার্ডটির মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার।

ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। ভাঙাচোরা রাস্তায় চলতে কষ্ট হয়। গতকাল রোববার দেখা যায়, ওয়ার্ডটির বাসিন্দাদের চলাচলের প্রধান রাস্তা বাউনিয়া সড়ক জায়গায় জায়গায় ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বাদালদি সড়ক, পাবনারটেক সড়ক, হাজি সোনা মিয়া সড়ক, তোতা মিয়া সড়ক, নাজির মাতবর সড়কসহ অন্যান্য শাখা সড়কগুলোও বেহাল। সড়কের পিচের আস্তরণ উঠে গেছে। এবড়োখেবড়ো সড়কের কোথাও বড় গর্ত। ধুলাবালু উড়ছে চারদিকে। সরু রাস্তায় একসঙ্গে দুটি প্রাইভেট কার চলতে কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যেই লেগে যাচ্ছে যানজট। সড়কে নেই বাতি।

বাদালদি সড়ক দেখে বোঝার উপায় নেই, এতে একসময় পিচ ছিল। বাউনিয়া বটতলা বাজার থেকে বাদালদি বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। ইট-সুরকিগুলো উঁচু-নিচু হয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে পানি জমে যায়।

বাদালদির বাসিন্দা মো. আয়নাল হক বলেন, রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ি চলার সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। এতে ব্যাটারিচালিত রিকশায় স্থির বসে থাকা যায় না। শিশু-নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বেশি কষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি সঠিকভাবে জনসাধারণের জন্য কাজ করতেন, তাহলে কি সড়কের এই দশা হতো?’

দেখা যায়, ওয়ার্ডের প্রধান রাস্তা বাউনিয়া সড়কের কালীবাড়িতে প্রায় ৩০০ মিটার অংশ ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন হেলেদুলে চলছে। কোনো গাড়ি গেলে রাস্তা ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। সড়কের দুপাশের দোকানিরা কিছুক্ষণ পরপরই পানি ছিটাচ্ছেন।

দোকানি জমশের আলী বলেন, রাস্তায় প্রচুর ধুলা ওড়ে। ধুলার জন্য দোকান খোলা রাখতে কষ্ট হয়। তিনি বলেন, বেশি পানি দিলে সড়কে কাদা হয়ে যায়। আবার হালকা করে পানি ছিটিয়ে বেশিক্ষণ ধুলামুক্ত রাখা যায় না।

স্থানীয় লোকজন বলেন, নালা না থাকায় বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে থাকে। বাসাবাড়িতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকায় অনেক নাগরিক সুবিধা নেই।

বাউনিয়া বটতলা বাজারের উত্তর-পশ্চিম পাশে ফেলা হয় আবর্জনা
বাউনিয়া বটতলা বাজারের উত্তর-পশ্চিম পাশে ফেলা হয় আবর্জনা

ওয়ার্ডে বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলার জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) আবর্জনা ফেলার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া ওয়ার্ডের সব এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করেন না ময়লা সংগ্রহকারীরা।এতে প্রতিদিনের আবর্জনা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। নিজেদের ইচ্ছামতো যত্রতত্র আবর্জনা ফেলেন বাসিন্দারা। আবর্জনা নিয়মিত ফেলার কারণে কিছু ফাঁকা জায়গা পরিণত হয়েছে অঘোষিত আবর্জনার ফেলার স্থানে।

দেখা যায়, বাউনিয়া বটতলা বাজারের একটু উত্তর-পশ্চিমের খালি জায়গা, আবদুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীত পাশের পুকুর, কালীবাড়ি বাজারের পাশের খালি জায়গা পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। নাকে হাত দিয়ে লোকজন এসব স্থানের পাশ দিয়ে চলাচল করছেন।

উলুদাহার বাসিন্দা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘আবর্জনা সংগ্রহ করা হয় না। তাই প্রতিদিনের আবর্জনা কোথায় ফেলব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।’ তাহলে কোথায় ময়লা ফেলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন যেখানে সুযোগ পাই ফেলে দিয়ে আসি।’

দলিপাড়ার বাসিন্দা মো. মোমেন খান বলেন, ‘আগে কয়েকটি ভ্যানে করে আবর্জনা সংগ্রহ করা হতো। শুনেছি এখন ১২ নম্বর সেক্টরে আবর্জনা ফেলতে দেওয়া হচ্ছে না। সংগৃহীত আবর্জনা কোথাও অপসারণের জায়গা না পাওয়ায় সংগ্রহকারীরাও ঠিকমতো ময়লা সংগ্রহ করছেন না।’

ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, হরিরামপুরের আবর্জনা এসটিএসে জমা রাখতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কারণ, চুক্তির বেশি আবর্জনা ঠিকাদার সেখান থেকে সংগ্রহ করবেন না। তিনি বলেন, হরিরামপুরের আবর্জনা সংগ্রহকারীরা আগে যেখানে আবর্জনা ফেলতেন, তাঁদের আপাতত সেখানে আবর্জনা ফেলতে বলা হয়েছে।

কমোডর আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, নতুন যুক্ত অঞ্চলে সেবা দিতে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। খুব শিগগিরই পরিকল্পনা অনুযায়ী সেবা চালু করা হবে।

এদিকে হরিরামপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, রাস্তার কাজ যেটুকু হয়েছে, তার সবগুলো পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে করা। বাজেটস্বল্পতার কারণে বাকি উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি।