নতুন হোল্ডিংয়ের গৃহকর আদায় নিয়ে জটিলতা

স্থাপনার আয়তন নাকি ভাড়া? কিসের ভিত্তিতে নতুন ২৮ হাজার ৭০২টি হোল্ডিংয়ের (গৃহের সংখ্যা) গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) আদায় করবে তা নির্ধারণ করতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ ব্যাপারে করণীয় জানতে চেয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় সংস্থাটি। মাস পেরিয়ে গেলেও ওই চিঠির লিখিত কোনো জবাব পায়নি করপোরেশন।

নতুন হোল্ডিংগুলো থেকে কর আদায় করা গেলে করপোরেশনের উন্নয়নকাজ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা আরও সহজ হতো বলে স্বীকার করেছেন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার স্বাক্ষরিত করা ওই চিঠিতে বলা হয়, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে তা মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তে স্থগিত করা হয়েছে। নতুন পাওয়া হোল্ডিংয়ের বিপরীতে  গৃহকর নির্ধারণ করা হয় ৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশন ও হোল্ডিং মালিকদের স্বার্থেই এসব নতুন হোল্ডিংয়ের আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে গৃহকর আদায় অতীব প্রয়োজন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ পরিশোধ করা হয় ২১০ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নে আপিল নিষ্পত্তির পর গৃহকর ধার্য করা হয়েছিল ১২২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন হোল্ডিংগুলোর আপিল নিষ্পত্তি করে গৃহকর চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা উচিত।

সিটি করপোরেশন করবিধি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২১ মার্চ কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রচলিত পদ্ধতি (স্থাপনার বর্গফুটের ভিত্তিতে) বাদ দিয়ে ভাড়ার ভিত্তিতে কর পুনর্মূল্যায়ন করে। এতে গৃহকর ‘অসহনীয়ভাবে’ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বাতিলের দাবি জানান সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের সব (১১টি) সিটি করপোরেশনের কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশের কয়েকটি সিটি করপোরেশনের সম্পন্ন হওয়া এবং চলমান কর পুনর্মূল্যায়নের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ আপিল দাখিল হয়েছে। আপিল পুনর্মূল্যায়ন বা অধিকাংশ অভিযোগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে। প্রথাগত (ম্যানুয়াল) পদ্ধতি অনুসরণ করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয়) পদ্ধতি চালু করে গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের কার্যক্রম শুরুর অনুরোধ করা হয়।

এদিকে মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দাবি করে, অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন সময়সাপেক্ষ। আবার পঞ্চবার্ষিকী গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদি। তাই এ সময়ে নতুনভাবে নির্মিত বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনাকে গৃহকরের আওতায় আনা জরুরি।

এ ছাড়া নতুন হোল্ডিংগুলোর আপত্তি নিষ্পত্তিক্রমে আদায়ের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এখনো লিখিত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। তবে মন্ত্রণালয় মৌখিকভাবে কোয়ার্টারলি অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে এসব হোল্ডিং থেকে গৃহকর আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন হোল্ডিংগুলোর গৃহকর ভাড়ার ভিত্তিতেই আদায় করা হবে। যখন অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে তখন তা সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সর্বশেষ কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষে করপোরেশন এলাকায় হোল্ডিং সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি। এর মধ্যে নতুন হোল্ডিং ২৮ হাজার ৭০২টি। নতুন নিয়মে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৯ টাকা।