জেল খালে অপরিকল্পিত সেতু

বরিশাল নগরের জেল খাল দখল করে অপরিকল্পিতভাবে কালভার্ট নির্মাণ করছে শের-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার বরিশাল নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অধ্যক্ষ ইউনুস খান সড়ক এলাকায় l প্রথম আলো
বরিশাল নগরের জেল খাল দখল করে অপরিকল্পিতভাবে কালভার্ট নির্মাণ করছে শের-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার বরিশাল নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অধ্যক্ষ ইউনুস খান সড়ক এলাকায় l প্রথম আলো

বরিশাল মহানগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জেল খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। খাল খনন ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু খনন ও সংস্কারের আগেই সেই খাল দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে অপরিকল্পিত সেতু। সিটি করপোরেশনের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের জন্য কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

স্কুলের দোহাই দিয়ে ওই সেতু নির্মাণ করছে শের-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করার কারণে অনুমতি নেওয়া হয়নি।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নেছা প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলের সামনে সড়ক আছে ঠিকই। কিন্তু বেশ কিছু শিক্ষার্থী খালের ওপার থেকে আসে। ওই সব শিক্ষার্থীর আসার সুবিধার জন্য স্কুলবরাবর খালের ওপর ওই সেতু নির্মিত হচ্ছে।

শের-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন বলেন, এই বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তা ছাড়া উত্তর দিক থেকে শিক্ষার্থীদের আসার জন্য বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে নথুল্লাবাদ এবং পূর্ব দিকে মধুমিয়ার পুল রয়েছে। ওই দুই সেতু এবং সামনের সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করে। তারপরও বিদ্যালয়ের পেছন দিকের খালের ওপর সেতু নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের নথুল্লাবাদ থেকে কয়েক শ গজ পুবদিকে জেল খালের ওপর সেতু নির্মাণ করছে ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ রোডে অবস্থিত শের-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে খালের দুই পাড়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট প্রশস্ত ঢালাই দিয়ে দুটি প্রাচীর তোলা হয়েছে, যা খালের পানি থেকে মাত্র দুই-তিন ফুটের বেশি উঁচু হবে না। খালের মধ্যে আরও একটি প্রাচীর তোলা হবে, এমন তথ্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ওপর বালু, রড, সিমেন্টের তৈরি ব্লক দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হবে। স্কুলের পেছনেই চলছে ব্লক নির্মাণের কাজ।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মোতালেব বলেন, খালের ওপর সেতু নির্মাণ করার আগে খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় কি না, সেতুর উচ্চতাসহ অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিতে হবে। সে জন্যই নগরের যেকোনো খালের ওপর ব্যক্তি উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করলেও সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে। জেল খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করলেও তারা কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।

বরিশাল নগরের খাল জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমাদের দাবি ছিল জেল খাল খনন করে খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা। নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেল খালসহ অন্য খালের পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। খাল খননে আশ্বাস দিয়েছে সিটি করপোরেশন। খাল খননের আগ মুহূর্তে স্কুলের দোহাই দিয়ে অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এটাও খাল দখলের মতোই। করপোরেশনের কাছে অনুরোধ, খাল খননের আগে যেন কোনো ধরনের সেতু নির্মাণ করা না হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর রশীদ বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ওই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে খাল দখল বা ভরাট করা হয়নি। স্কুলবরাবর খালের দুই পাড়ে দুটি প্রাচীর তোলা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ওই দুটি প্রাচীর নিচু মনে হলেও ওর ওপরে আরও এক ফুট উঁচু করা হবে। এরপর খালের মাঝবরাবর লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তার ওপরে ব্লক দিয়ে তৈরি হবে সেতু। ওই সময় আর কোনো অসুবিধা হবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জেল খাল দখলমুক্ত করেছি। খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খাল খননে ২৩০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নগরের খালের ওপর কালভার্ট করা বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে কোনো অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। আগে খাল খনন, তারপর অন্য কাজ। ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজন থাকলে সিটি করপোরেশন সেতু নির্মাণ করে দেবে।’