বরগুনায় প্রাথমিকে ৬৪৭ জন শিক্ষকের পদ শূন্য

বরগুনার তালতলী উপজেলার মৌরুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদ থাকলেও এসব পদ শূন্য আছে। পাশের তাঁতীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে এসে পড়াচ্ছেন।

শিক্ষক শাহ আলম বলেন, মৌরুবী বিদ্যালয়ে নিয়মিত কোনো শিক্ষক নেই। এর আগে একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি গত বছরের মে মাসে অবসরে গেছেন। এরপর থেকে তিনি (আলম) মৌখিক আদেশে এখানে পড়াচ্ছেন। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো সম্ভব নয়। তাই দপ্তরি কবির হোসেন তাঁকে সহায়তা করছেন।

বরগুনা জেলায় ৮১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩১০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। আর সহকারী শিক্ষকের ৩৩৭টি পদ শূন্য। শিক্ষক সংকটের কারণে এসব বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদরে ২২৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৮টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। আমতলী উপজেলায় ৭৯টি ও তালতলীতে ৩৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। পাথরঘাটায় ১৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৬টি চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়া। বামনায় ২৫টি ও বেতাগীতে ১৩টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই।

সহকারী শিক্ষকের সংকটও চলছে জেলার বিদ্যালয়গুলোতে। সদরে ৬৫টি, আমতলীতে ৪২টি, তালতলীতে ৬১টি, পাথরঘাটায় ৭৫টি, বামনায় ৫৬টি, বেতাগীতে ৩৮টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

সদর উপজেলার নিশানবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাঁচটি পদ আছে। কিন্তু বর্তমানে দুজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এই বিদ্যালয়ে ১০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সহকারী শিক্ষক নাজনীন বেগম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, তাঁকে প্রায়ই দাপ্তরিক কাজে জেলা শহরে যেতে হয়। একজন শিক্ষক দিয়ে তখন বিদ্যালয় চলে। এভাবে চলতে থাকলে পড়ালেখা ঠিকমতো হবে না।

পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, সেখানেও দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজা বেগম বলেন, দেড় বছর ধরে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৫।

বেতাগি উপজেলার দেশান্তরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র বলেন, শিক্ষকের সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ানো যায় না। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ক্লাস করাতে হিমশিম খেতে হয়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুস সালাম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না হওয়ায় শিক্ষকের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শূন্য পদের তালিকা ইতিমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

আমতলী উপজেলার ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ওই স্কুলগুলোতে দুজন করে শিক্ষক রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। বেশির ভাগ সময় একজন শিক্ষককে বিদ্যালয় চালাতে হয়। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। তা ছাড়া পরীক্ষার পর খাতা দেখা ও ফলাফল ঘোষণা করতেও দেরি হচ্ছে।

উত্তর গেরাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসাদুল হক বশির বলেন, দুজন শিক্ষক দিয়ে এতজন শিক্ষার্থীকে পড়ানো যায় না। এ ছাড়া তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, প্রেষণে শিক্ষক দেওয়ার কোনো ক্ষমতা তাঁর নেই। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আদেশ লাগে। তাই শিক্ষকের সংকট থাকলেও সমাধান করা যাচ্ছে না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল হোসেন বলেন, শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য তাঁরা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এই সংকটের সমাধান করা হবে।