মিয়ানমারের ওপর চাপ রাখুন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ফাইল ছবি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সঙ্গে সই করা দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশ তাদের যুক্ততার সুযোগ তৈরি করেছে। তারা সম্পৃক্ত না থাকলে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারকে অঙ্গীকার পূরণে বাধ্য করাটা কঠিন হতে পারে।

গতকাল রোববার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে
হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় এ অনুরোধ জানান। তিনি এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৫২টি মিশনের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গতকাল ওই সভায় উপস্থিত কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর নেপিডোতে প্রত্যাবাসনের মূল চুক্তি, ১৯ ডিসেম্বরের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও ১৬ জানুয়ারির মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন। এ তিনটি বিষয়ের পাশাপাশি তিনি স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও পরিকল্পনাও তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরার পর সেখানকার সমাজে তাদের অন্তর্ভুক্তি এবং রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ও তুলে ধরেন। সব শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও রাখাইন থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল থামছে না।

রাখাইনের নৃশংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো ভূমিকা রাখায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে অঙ্গীকার পূরণে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অব্যাহত ভূমিকা রাখার কথাও বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সভার পর আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করবে। চুক্তির খসড়া নিয়ে আমরা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছি। চুক্তি সই হলে তারা প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে। প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে যুক্ত করতে মিয়ানমার সরকারও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে মিয়ানমার এখন আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে যুক্ত করবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর তৈরি করে দেবে ভারত, চীন ও জাপান। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছি।

২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে কি না, জানতে চাইলে মাহমুদ আলী বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া কিন্তু এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমি আপনাদের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলতে পারি না।’

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না।

এর আগে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক এবং ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরার পাশাপাশি প্রত্যাবাসন টেকসই করার ওপর জোর দেন।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা সব সময় বিশ্বাস করি যে বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো যাতে ফিরে যায় সে পরিবেশ তৈরির জন্য রাখাইনে টেকসই উন্নয়ন হওয়া উচিত। রাখাইনের আর্থসামাজিক উন্নয়নের যে সুপারিশ কফি আনান কমিশন করেছে, তার সঙ্গে সংগতি রেখে ভারত রাখাইন উন্নয়ন কর্মসূচি সই করেছে। এ জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে কম খরচে ঘর তৈরি করছি, যাতে প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের থাকা নিশ্চিত হয়। আমরা মনে করি, প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শুরু হওয়া উচিত। কারণ ওই সব লোকজনের নিজেদের বাড়িতে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ।’

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘সবার উদ্বেগ নিয়ে আপনাকে প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরির জন্য কাজ করতে হবে। এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই যে পরিস্থিতি ভালো নয় এবং কারও যাওয়া উচিত হবে না।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা ফিরে যেতে চায় না। কাজেই রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপদে ফেরত পাঠানো বড় চ্যালেঞ্জ এবং রাখাইনে উন্নয়ন জরুরি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে হতে হবে বলে জানান যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক।