'দোয়া করবেন যেন আর দল বদল না করি'

লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচার তামাক ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন সোমবার সন্ধ্যায় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের হাতে পিতলের একটি নৌকা তুলে দিয়ে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ছবি: প্রথম আলো
লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচার তামাক ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন সোমবার সন্ধ্যায় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের হাতে পিতলের একটি নৌকা তুলে দিয়ে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ছবি: প্রথম আলো

ষাটোর্ধ্ব তামাক ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন। দল বদল করাই তাঁর শখ। এর আগে তিনি দুবার আওয়ামী লীগে, একবার জাতীয় পার্টিতে এবং দুবার বিএনপিতে যোগদান করেন। এবার তিনি তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া (সর্দারপাড়া) গ্রামের মৃত ছৈমুদ্দিনের ছেলে।

দল বদলের জন্য মমতাজ উদ্দিনের খ্যাতি পুরো উপজেলায়। আজ সোমবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের হাতে পিতলের একটি নৌকা তুলে দিয়ে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এ উপলক্ষে তিনি প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করে ২০ হাজার লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করেন। পাশাপাশি ছয়টি সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ ও যোগদান অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করেন। এই যোগদান অনুষ্ঠানের বিষয়টি উপজেলার বাইরে জেলা শহর পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি বারবার দল বদল করেছি—এ কথা সত্য। তবে আর দল বদল করতে চাই না। আওয়ামী লীগ দেশের সেরা রাজনৈতিক দল, গণমুখী দল। এখানে কাজ করার, জনসেবা করার অনেক সুযোগ। তাই আমি এই দলে বারবার ফিরে এসেছি। আপনারা দোয়া করবেন, আমি আর যেন দল বদল না করি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু মানুষকে খাওয়ানোর ক্ষমতা আমার আছে, তাই মহিষখোচা ইউনিয়নের মানুষসহ আশপাশের মানুষ চায় আমি যেন তাদের খাওয়াই। এ কারণে আমি এবার এমন আয়োজন করলাম।’

সোমবার দুপুরে মমতাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িসংলগ্ন তামাক শুকানোর চাতাল ও গুদামঘরের পাশে রান্নার বিশাল আয়োজন। ১২টি চুলায় রান্না হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। অপর পাশে রান্না করা পোলাওর সঙ্গে রান্না করা মাংস দিয়ে প্যাকেট তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকেরা। স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকদের জন্য ৩০০টি হাফহাতা গেঞ্জির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব গেঞ্জির গায়ে ‘মমতাজ ভাইয়ের যোগদান অনুষ্ঠান’ লেখা রয়েছে।

তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগদান উপলক্ষে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ হাজার লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করেন মমতাজ উদ্দিন। তাঁর বাড়িতে চলছে রান্নার বিশাল আয়োজন। ছবি: প্রথম আলো
তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগদান উপলক্ষে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ হাজার লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করেন মমতাজ উদ্দিন। তাঁর বাড়িতে চলছে রান্নার বিশাল আয়োজন। ছবি: প্রথম আলো

মমতাজ উদ্দিনের একমাত্র ছেলে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমার বাবা মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করেন। তাই ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ অনুষ্ঠান করলেন। পাঁচটি গরু ও ১৫টি খাসি দিয়ে মেজবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামের মানুষদের পাশাপাশি অতিথিরা খাবেন—এটাই আমাদের আনন্দ।’

মমতাজ এর আগে ২০১১ সালে মহিষখোচা ডিএস দাখিল মাদ্রাসা চত্বরে এক অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল হকের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে প্রথমবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চান তিনি। সেটি হতে না পেরে ২০১২ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিবের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। সেবার তিনি তাঁর নিজ বাড়িতে তিন-চার শ লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করেন।

মমতাজ ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। কিন্তু নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হতে না পেরে ওই বছরই দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপিতে যোগ দেন। সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যায় মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজমাঠে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উন্নয়নমুখী দল, নতুন মানুষ যেমন এ দলে যোগ দেয়, তেমনি দল ছেড়ে যাওয়া মানুষও ফিরে আসে। আমরা সবাইকে নিয়েই দেশের সেবা করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সিরাজুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিষখোচা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবিয়ার রহমান।

মহিষখোচা ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মজিদ বলেন, এত ব্যয়বহুল যোগদান অনুষ্ঠান এর আগে এ উপজেলায় হয়নি। বারঘড়িয়া (সর্দারপাড়া) গ্রামের অটোরিকশাচালক নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, মমতাজ উদ্দিন ঘড়ির কাঁটার মতো চলেন। তিনি কখন কোনো দল করবেন তা তিনিই জানেন। কত দিন তিনি আওয়ামী লীগে থাকবেন, তা শুধু তিনিই বলতে পারেন।