যুবদল নেতা হত্যায় ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও যুবদল নেতা মো. ইউনুছ আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা জজ আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার নিহত ইউনুছ আলীর স্ত্রী কাজী শাহানা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক মো. আতাবুল্লাহ মামলাটি গ্রহণ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন—হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ও ওমর ফারুক, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেলোয়ার হোসেন ও সাজিদ মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল মনিন্দ্র চাকমা, আবদুল হামিদ, ও চুনারুঘাট থানার গাড়ি চালক নুরুজ্জামান।

নিহত চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. ইউনুছ আলী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিণ হাতুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ফার্নিচার ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতি করতেন। চুনারুঘাট পৌর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মামলার বাদী কাজী শাহানা আক্তার আদালতে অভিযোগ করেন, গত বছরের ১ আগস্ট রাত সাড়ে ৭টায় চুনারুঘাট থানার এএসআই দেলোয়ার হোসেন ও সাজিদ মিয়া বাদীর বসত ঘরে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এতে দেলোয়ার আহত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দেলোয়ার ও সাজিদ বাদীর স্বামী মো. ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে জিআর ২৫১/১৭ ধারায় মামলা করেন। বাদী একই সময়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাদী ও তাঁর স্বামী ইউনুছের সম্পর্কের অবনতি হয়। পুলিশ ইউনুছ ও তাঁর স্ত্রী শাহানাকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে হেনস্তা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ইউনুছ সম্প্রতি পুলিশের মামলায় আদালত থেকে মুক্তি পান। অপর দিকে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা নারী নির্যাতন আইনের মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা সময় তাঁদের চাপ দিচ্ছিলেন। এ ছাড়া তাঁরা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ইউনুছকে অপহরণের চেষ্টাও করেন।

মামলার বাদী আরও অভিযোগ করেন, গত ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে চুনারুঘাট থানার এসআই আতাউর রহমান ও ওমর ফারুক, এএসআই দেলোয়ার হোসেন ও সাজিদ মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল মনিন্দ্র চাকমা, আবদুল হামিদ, ও চুনারুঘাট থানার গাড়ি চালক নুরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ তাঁর স্বামী ইউনুছ আলীকে উপজেলার মারুরা গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে রেখে ইউনুছের বুকে ও কোমরের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া লাশের ডান হাত ভাঙা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। লাশের ধরন দেখে বাদী প্রমাণ পেয়েছেন, উল্লেখিত সাত আসামি পরিকল্পিত ভাবে তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছেন।

বাদীর আইনজীবী আবদুল হাই ও মো. সিরাজ আলী মীর প্রথম আলোকে বলেন, মামলার শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহ এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী কাজী শাহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পরের দিন পুলিশ লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের লাশ দেখতে দেয়নি পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

চুনারুঘাট থানার এসআই আতাউর রহমানসহ অভিযুক্তরা দাবি করেন, তাঁরা অন্য একটি মামলার আসামি ধরতে মারুরা গ্রামে গিয়েছিলেন। সে সময় অভিযুক্ত আসামির সঙ্গে ইউনুছ ছিলেন। ইউনুছ ধারালো ছুরি দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা করেন। আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে ইউনুছ আহত হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে গত ১ জানুয়ারি ও গত ৮ জানুয়ারি প্রথম আলোয় দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ।