শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরও দু-একজন জড়িত

ঘুষ লেনদেনের মামলা দুদকে।
রিমান্ড আবেদন করেনি পুলিশ আসামিরা কারাগারে।
জড়িত অন্যদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া মো. মোতালেব হোসেন ও মো. নাসিরউদ্দীন
গ্রেপ্তার হওয়া মো. মোতালেব হোসেন ও মো. নাসিরউদ্দীন

লেকহেড গ্রামার স্কুল দ্রুত চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুষ আদায়ের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের আরও দু–একজন জড়িত ছিলেন। স্কুলটির মালিক খালেদ হাসান মতিনের কাছ থেকে এ জন্য তাঁরা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। তবে বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম মৃধা সোমবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে বনানী থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে এসব তথ্য দেওয়া হয়। তবে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন ও উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরউদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পুলিশ আর করছে না। পুলিশ বলছে, যে ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেটি তদন্ত করার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

গতকাল দুপুরে দুদক মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মামলাটি তাঁরা তদন্ত করে দেখবেন। তবে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন সত্যিই জঙ্গিবাদে জড়িত কি না, তা তদন্ত করবে পুলিশ।

তবে গতকাল আসামিদের তিনজনকে পুলিশ আদালতে উপস্থাপন করলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করেনি। পুলিশ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। আবেদন মঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনজনের পক্ষে করা জামিনের আবেদনও তিনি নাকচ করে দেন।

এজাহারে যা বলা হয়েছে

বনানী থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি খালেদ হাসান মতিন ও তাঁর সহযোগী ‘আসিফ’ আদালতের শর্ত ভেঙে লেকহেড গ্রামার স্কুল দ্রুত চালুর চেষ্টা করছিলেন। এ জন্য তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরউদ্দীন ও শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত ১৬ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা ও কর্মচারী লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনের গাড়িতে করে বনানীর আর এম গ্রুপের অফিসে যান। লেকহেড গ্রামার স্কুল দ্রুত চালুর ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষের রফা হয়। এর অংশ হিসেবে ১৮ ডিসেম্বর মো. নাসিরউদ্দীন ওই অফিসে গিয়ে খালেদ হাসান মতিনের কাছ থেকে প্রথম দফায় ৫০ হাজার টাকা নেন। বাকি টাকা থেকে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর তিনি ৫০ হাজার টাকা ও ১১ জানুয়ারি ২ লাখ টাকা নেন তাঁরা। উৎকোচের একটা অংশ পান শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরও দু–একজন কর্মকর্তাও ঘুষের একটা অংশ পেতেন।

টাকার বিনিময়ে ওই কর্মকর্তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকা লেকহেড গ্রামার স্কুলের গোপন নথিপত্র খালেদ হাসান মতিনকে দিয়ে দেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, খালেদ হাসান মতিন তাঁর বন্ধু রেজওয়ান হারুনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ যুবকদের জামায়াতুল মুসলেমিন নামের জঙ্গি সংগঠনে যোগদানে সহায়তা করতেন।

উপপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম মৃধা এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ২২ জানুয়ারি (সোমবার) তিনি খবর পান ঘুষের বাকি থাকা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ওই দিনই কোনো এক সময়ে বনানীতে লেনদেন হবে। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে মো. নাসিরউদ্দীন ঘুষ নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন। তাঁর কাছ থেকে ১ হাজার টাকার ১৩০টি নোট উদ্ধার হয়। নাসিরউদ্দীন নিজেই বনানীর ওই অফিসে ঢুকে খালেদ হাসান মতিনকে শনাক্ত করেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই দুজনের সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেনের যোগাযোগ রয়েছে। পরে তাঁকে সোমবার পৌনে ৮টার সময় ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. মোতালেব হোসেন ও মো. নাসিরউদ্দীনকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কথা জানান।