ধর্ষণ প্রমাণে 'টু ফিঙ্গার টেস্ট'র ভিত্তি নেই

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর (ভিকটিম) শারীরিক পরীক্ষায় টু ফিঙ্গার টেস্ট বা দুই আঙ্গুলি পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের পরীক্ষা অযৌক্তিক এবং এভাবে পরীক্ষা ভিকটিমকে আবার ধর্ষণ করার শামিল। তাই এ পরীক্ষা বাতিল করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ফরেনসিক চিকিৎসক, আইনজীবী, পুলিশ, এনজিও প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞরা এ মত দিয়েছেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন জানান, ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তথাকথিত ‘দুই আঙ্গুলি পরীক্ষা’ কেন আইনানুগ বহির্ভূত এবং অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা নিয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। দুই আঙুলের মাধ্যমে ধর্ষণ পরীক্ষাপদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট—ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষসহ দুই চিকিৎসক এই রিট আবেদনটি করেন। আদালতে মামলাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আদালতের এ পরীক্ষা নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ জানতে চেয়েছেন, তার জন্যই এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ধরনের সভা এর আগেও হয়েছে।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম এ ধরনের একটি পরীক্ষা রাষ্ট্র কীভাবে অনুমোদন দিতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে এ পরীক্ষা করার মানে হলো মনুষ্যত্বের অবমাননা। অযৌক্তিক এবং বর্বর। এটি নিয়ে লড়াই করার কিছু নেই, তারপরও বছরের পর বছর এ নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুকেই কেন প্রমাণ করতে হবে যে সে ধর্ষণের শিকার, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ইন্দো প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল, মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজাহেরুল হক বলেন,‘গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেন, টু ফিঙ্গার টেস্ট নামে কিছু পাবেন না। বিজ্ঞানে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেই যাচ্ছি। এ ধরনের পরীক্ষা বিশ্বাসযোগ্যও নয়। এ পরীক্ষা দিয়ে ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি তা প্রমাণের কোনো ভিত্তি নেই।’

ধর্ষককে শারীরিক পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করে মেজাহেরুল হক বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, ভিকটিমের ট্রমা, শরীরের আঘাতসহ বিভিন্ন কিছু দিয়েই ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি, তা প্রমাণ করা যায়। এটা কোনো মানদণ্ড হতে পারে না। আর ধর্ষণ মানেই জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক হতে হবে তা–ও কোথাও বলা নেই। শুধু টু ফিঙ্গার টেস্ট বাতিল নয়, পুরো ‘সিস্টেম’–এ পরিবর্তন আনতে হবে।

সভায় স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক লতিফা শামসুদ্দিন এবং অধ্যাপক রওশন আরা বেগম দৃঢ় ভাষায় জানালেন, ধর্ষণ পরীক্ষায় এ ধরনের টেস্টের কোনোই প্রয়োজন নেই।

সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিটের জেন্ডার, এনজিও অ্যান্ড স্টেকহোল্ডার পার্টিসিপেশন ইউনিটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার চিকিৎসক আয়েশা আফরোজ চৌধুরী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, নারীপক্ষের সদস্য রীতা দাশ রায়, কামরুন নাহার, আইনজীবী মাসুদা রেহানা বেগম, আবু ওবায়দুর রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।