সম্মাননা পেলেন সালমা

দিনাজপুরে গৃহপালিত পশুর একমাত্র টিকাদানকর্মী সালমা বেগমকে সংবর্ধনা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরে গৃহপালিত পশুর একমাত্র টিকাদানকর্মী সালমা বেগমকে সংবর্ধনা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরে গৃহপালিত পশুর একমাত্র টিকাদানকর্মী সালমা বেগমকে সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আজ শনিবার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আশিকা আকবর প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের শেষ দিনে শনিবার দুপুরে জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক সালমা বেগমের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

সালমা বেগম খানসামা উপজেলার দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের মজিব উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে গবাদি পশুপাখির চিকিৎসা করেন। এ ছাড়াও তিনি চালু করেছেন পশুখাদ্যের দোকান। এসব করে মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। নিজে না পারলেও তিন মেয়েকে করাচ্ছেন লেখাপড়া। সালমার এ সংগ্রামী জীবন নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‌‘গ্রামে ঘুরে পশু পাখির টিকা দেন সালমা ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় সালমা বেগমের বাবার মৃত্যু হয়। তাঁর বিয়ে হয় পরের বছর। সালটা ১৯৯০। এর তিন বছরের মাথায় কাঁচামালের ব্যবসায়ী স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় শ্বশুর-শাশুড়ি আলাদা করে দেন তাঁদের। জমিজমা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন সালমা। ১৯৯৬ সালে কোলজুড়ে আসে মেয়ে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়ে সালমার। সিদ্ধান্ত নেন নিজে কিছু করার। শুরু করেন পশুর চিকিৎসাসেবাসহ টিকাদানের প্রশিক্ষণ।

নারীদের জন্য ব্যতিক্রমী এই পেশায় সালমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান পরিবার ও সমাজ। শুরু হয় নির্যাতন, ভর্ৎসনা। কিন্তু কিছুই দমাতে পারেনি সালমার সিদ্ধান্তকে। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি এখন দিনাজপুরের গৃহপালিত পশুর একমাত্র টিকাদানকর্মী।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, ‘সালমাকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরাও খুশি ও গর্বিত। তিনি এ পেশায় অনুপ্রেরণাদায়ী। সালমাকে সামনে রেখে অনেক নারীই এখন এ পেশায় আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

সালমা বেগম বলেন, প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই উৎসাহী হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও যোগাযোগ করেছেন। সংবর্ধনা পাওয়ায় এ কাজের আরও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।