ফসলি জমিতে ইটভাটা

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। গত তিন মাসে উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের দড়িপাড়া ও সোনাকানিয়া গ্রামে ইটভাটা দুটি গড়ে উঠেছে। লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি নির্মিত সোনাকানিয়া গ্রামের ভাটায় ইট পোড়ানো চলছে পুরোদমে। দড়িপাড়া গ্রামে প্রায় ২৫ বিঘা ফসলি জমির ওপর অন্য ভাটাটিতে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।

জানতে চাইলে বগুড়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক এ কে এম মাসুদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুটি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেয়নি। তাই সেগুলো অবৈধ। এসব ভাটার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভাটার অবস্থান হতে হবে লোকালয় ও এলজিইডির পাকা সড়ক থেকে ন্যূনতম আধা কিলোমিটার দূরে। প্রস্তাবিত জায়গাটি আবাদি কি না সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের অনাপত্তি, ট্রেড লাইসেন্স, আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র হাতে পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে স্বপ্নপূরণ সাপেক্ষে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কৃষি বিভাগ থেকে অনাবাদি জমির প্রত্যয়ন না দিলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের প্রশ্নই আসে না।

গাবতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মো. আহসান শহীদ বলেন, উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামে প্রায় ২৫ বিঘা আয়তনের তিন ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। সোনাকানিয়া গ্রামেও প্রায় একই পরিমাণ আবাদি জমিতে ভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবাদি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি। উল্টো সোনাকানিয়ায় আবাদি জমিতে ভাটা স্থাপন করে ইট পোড়ানোয় সরেজমিন তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

২২ জানুয়ারি দড়িপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বগুড়া-চন্দনবাইশা এলজিইডির পাকা সড়কের আনুমানিক ২০০ গজের মধ্যে প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বিঘা আয়তনের আবাদি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। লোকালয় থেকে ভাটার দূরত্ব খুব কাছাকাছি। প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক ভাটা নির্মাণের কাজ করছেন। ফসলি জমির মাটি কেটে পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

ভাটা নির্মাণের তদারককাজের ব্যবস্থাপক মোমিনুল ইসলাম বলেন, স্তূপ করে রাখা মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হবে। প্রায় দেড় মাস ধরে ভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ভাটায় ইট পোড়ানোর চুল্লির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে চিমনি নির্মাণের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। ভাটার নাম দেওয়া হয়েছে সুরমা ব্রিকস ফিল্ড।

দড়িপাড়া গ্রামের পাঁচজন কৃষক বলেন, গত আমন মৌসুমেও ওই ২৫-২৬ বিঘা জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। অন্য বছর এ সময় বোরো চাষ হতো। কিন্তু এখন ফসল চাষের বদলে জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে শুধু ওই ২৫-২৬ বিঘা জমিতেই কৃষি চাষাবাদ বন্ধ হচ্ছে না, ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় পাশের গোটা মাঠজুড়ে শত শত বিঘা জমিতে ফসল চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন কৃষক বলেন, লোকালয় ঘেঁষে আবাদি জমিতে এভাবে ইটভাটা নির্মাণের বিপক্ষে এলাকার কৃষকেরাও। কিন্তু ভাটার মালিক এলাকার খুব প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এখন ২৬ বিঘা দিয়ে শুরু করলেও এভাবে ফসলি মাঠে ভাটা হলে অন্য জমিতে কোনো কৃষি আবাদ হবে না। তখন ভাটার মালিককে এমনিতেই জমি ছেড়ে দিতে হবে।

ভাটার মালিক ও বগুড়া নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান বলেন, ২৫ বিঘা জমির মধ্যে কিছু নিজের ও কিছু অন্যের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এসব জমি এক ফসলি। কৃষি চাষাবাদে কোনো লাভ হয় না। অন্য কারও জমির ক্ষতি হবে না, কারণ জিগজ্যাগ পদ্ধতির এই ভাটায় ৮০ ফিটের চিমনি। এতে আধুনিক পদ্ধতি থাকায় নির্গত ধোয়ায় পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না। তিনি বলেন, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও প্রশাসন থেকে লাইসেন্স এখনো নেওয়া হয়নি, তবে ভাটা নির্মাণের পর এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

সোনাকানিয়া গ্রামের ইটভাটার মালিক শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ এলাকার ফরহাদ হোসেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বিঘা ফসলি জমিতে গড়ে তোলা এই ভাটায় প্রায় তিন মাস ধরে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটায় গিয়ে দেখা মেলেনি ভাটার মালিকের। কর্মচারীরা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, গাবতলীতে নতুন কোনো ইটভাটার লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে কি না ও প্রদান করা হয়ে থাকলে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।