সমাবেশ ডেকে স্থগিত করলেন শামীম ওসমান

শামীম ওসমান
শামীম ওসমান

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ৩ ফেব্রুয়ারি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে স্থগিত করলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নির্বাচনী তৎপরতা দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রেস ব্রিফিংয়ে সমাবেশ স্থগিতের এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমাবেশ করার মতামত চূড়ান্ত করতে না পারা এবং ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের পরে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে জনসভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
গত শনিবার অনুগতদের নিয়ে নগরীর ইসদাইরে ওসমানী স্টেডিয়ামে এক কর্মিসভায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেন শামীম ওসমান। এর তিন দিনের মাথায় তিনি তা স্থগিত করলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই প্রমুখ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকেরা সশস্ত্র হামলা চালান। এতে কেন্দ্রে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিজের শক্তি দেখাতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে শামীম ওসমান নিজেই ওই সমাবেশ ডেকেছিলেন। দলীয় নেতাদের চাপে পড়ে শামীম ওসমান ওই সমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।

শামীম ওসমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান, দলের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে জনসভার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে যারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তাদের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। এ সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-বিএনপির ওপর ভর করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে আগে থেকে সচেতন করে, সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তাদের আহ্বান জানানো এবং সারা দেশকে উজ্জীবিত করার জন্য এ সমাবেশটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে মতামত ফাইনাল করতে পারি নাই। তাই কৌশলগত কারণে ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ের পরে সুবিধাজনক সময়ে নারায়ণগঞ্জে জনসভা করব।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ নয়, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করব। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি যে জনসভাটি আছে, সেই জনসভাটি আপাতত স্থগিত করছি। কারণ, এই জনসভাটিতে যে বিষয় তুলে ধরতে চাচ্ছি, ৮ তারিখের আগে যেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের পরিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়, তাই ৮ তারিখের পরে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা অনুরোধ করব, আমরা এ দেশে শান্তি চাই। আমরা চাই দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটুক। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ পুড়িয়ে মারা কোনো গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হতে পারে না। কেউ যদি তাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করতে চান, তারা করতে পারেন। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও, মানুষের সম্পদ ধ্বংস করে যদি কেউ করতে চায়, তাহলে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়েই তাদের রুখে দাঁড়াবে—এই বার্তাটি আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই।’

১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হকার ও শামীম ওসমানের পক্ষের নেতা-কর্মীদের হামলায় আইভী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এ সময় শামীম ওসমানের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম খানের হাতে দেখা যায় অস্ত্র। এ ঘটনায় মেয়র আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার বাদী হয়ে নিয়াজুল, শাহ নিজামসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজারকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ওই অভিযোগটি গ্রহণ করে তা জিডি হিসেবে রেকর্ড করে। ওই দিনের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।

এরপরই গত শনিবার ওসমানী স্টেডিয়ামে অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মিসভায় শামীম ওসমান মেয়র আইভীকে অস্ত্রধারী নিয়াজুলসহ তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘বাঘের মুখের সামনে হাত বেশি নাড়াইয়েন না। তারা (মামলার অভিযুক্তরা) ডাকলে শামীম ওসমান লাগবে না—দুই, চার, পঞ্চাশ, এক লাখ লোক আসবে কিন্তু। তখন কিন্তু থামাইতে পারুম না।’ ওই দিনই তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমাবেশের ঘোষণা দেন।