চাকরি পেয়ে খুশি, নিয়োগ বিলম্বে হতাশ

>
  • চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর বছর পেরোলেও নিয়োগ পাননি ২০৭ জন সহকারী জজ।
  • পুলিশি যাচাইয়ে চলে যাচ্ছে বড় সময়।
  • নিম্ন আদালতে বিচারকের প্রায় ৪০০টি পদ বর্তমানে খালি।

 প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত বাছাইয়ে সময় লেগেছে ১১ মাস। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা আশায় ছিলেন নিয়োগের বাকি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে। কিন্তু সেই অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। ফল প্রকাশের পরে আরও ১২ মাস পেরোলেও চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি সহকারী জজ পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ২০৭ জন।

নিম্ন আদালত সূত্র জানায়, বর্তমানে নিম্ন আদালতে বিচারক আছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন। বিচারকের পদ খালি আছে প্রায় ৪০০টি। সারা দেশে বিচারাধীন মামলা প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ। নিম্ন আদালতের প্রতিজন বিচারকের অধীনে শুনানি ও বিচারের জন্য গড়ে ২ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, নিম্ন আদালত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বলছেন, নিম্ন আদালতে মামলাজট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ নতুন বিচারক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা দ্রুত চাকরিতে যোগ দিতে পারলে এ জট কমত।

প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে নিয়োগ হয় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। তবে সহকারী জজ নিয়োগের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএসসি)। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর ২০০৭ সালে এই কমিশন গঠিত হয়।

নতুন সহকারী জজ নিয়োগের ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের মার্চে ১০ম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বছরের মে মাসে প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশ করা হয় ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি। তাতে ২০৭ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১১ মাসের মাথায় বিজেএস নিয়োগের পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজ শেষ করে। কিন্তু এখনো গেজেট না হওয়ায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা সহকারী জজ পদে চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না।

নিয়োগপ্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। উত্তীর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন দিতে দুই মাসের বেশি কোনোভাবেই লাগার কথা নয়। অথচ প্রায় এক বছরেও তা হচ্ছে না। চাকরি পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। নিয়োগ পেতে দেরি হওয়ায় এখন হতাশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পরেশ চন্দ্র শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে কমিশন পরীক্ষা শেষে সুপারিশসহ কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত নিয়োগ দেবে।

জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেন, সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের তালিকা পুলিশি যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। গত মাসে যাচাই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে ১০ম বিজেএসের সহকারী জজদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

যাচাইয়ে লাগছে বেশি সময়

বিজেএসসি সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিজেএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের মাত্র দুই থেকে চার মাসের মধ্যে যাচাই প্রতিবেদন শেষ হয়েছিল। এই দুবারে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছিল কম। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিটি বিজেএসের নিয়োগ শেষ করতে ক্রমেই সময় বাড়ছে। মূলত পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়াতেই সময় লাগছে বেশি। ফলে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পরে দীর্ঘ সময়েও চাকরিতে যোগ দিতে পারেন না সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৯ মে নবম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর নবম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে প্রায় ১২ মাস সময় লাগিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

অষ্টম বিজেএসে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে ২৯ মাস। এর মধ্যে যাচাইয়ে লাগে প্রায় ১১ মাস। সপ্তম বিজেএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয় ২৮ মাসে। এর মধ্যে যাচাই প্রতিবেদনে যায় ১০ মাস। ষষ্ঠ বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সময় লাগে ২৮ মাস। এর মধ্যে যাচাইয়ে যায় ১৪ মাস।

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, অকারণ দীর্ঘসূত্রতার কারণে মেধাবী তরুণদের এভাবে বেকার থাকা কষ্টদায়ক। পুলিশি যাচাইয়ের কারণে বিচারক নিয়োগ করতে না পারা দুঃখজনক। ভারতে পুলিশি যাচাই ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়, প্রতিবেদনে নেতিবাচক কিছু পেলে পরে বাদ দেওয়া হয়। পুলিশি যাচাই-বাছাইয়ে এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগা উচিত নয়।