শীতের পর আসছে ঝড়-ঝঞ্ঝা

>

*ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের বিদায়ের পরপরই বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টি বয়ে যাবে। এর সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়বে।
* পশ্চিমা লঘুচাপ ও পূর্বদিকের বাতাসের সংমিশ্রণ ঘটলে বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

এই তো আর কয়েকটা সপ্তাহ, এরপরই শীত বিদায় নেবে। ফাগুনের আবাহনে পাততাড়ি গুটাবে মাঘ। চলতি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আসবে বসন্ত। শুরু হবে ধূলি ওড়ানো পাতাঝরা শুকনো দিন।

জানুয়ারিতে কী শীতটাই না পড়েছিল! টানা শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু জনজীবন। ৮ জানুয়ারি যখন উত্তরাঞ্চল ও আশপাশের এলাকায় এই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়, তা অর্ধশত বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙে। এ দিন তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র শীতের এই রেকর্ড ৫০ বছর ধরে রেখেছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা। পাহাড়-টিলায় ঘেরা এই এলাকায় ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে এটিই ছিল বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এর পর প্রতিবছর তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও দেশের কোথাও ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে নেই।

১০ জানুয়ারি তীব্র শৈত্য প্রবাহের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। ১১ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৪ দিন দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যায়। ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারি ৪ দিন আবার দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যায়। এর সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল সারা দেশ। বাতাসের নিম্নœস্তরে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকায় নদী অববাহিকা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে এবারের জানুয়ারি মাসে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক চেয়ে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ গত ৩০ বছরের হিসাবে এই মাসের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এখনো দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কিছু এলাকায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু হিমশীতল রূপে থাকছে না এই মাস। কারণ ১৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে বাংলার ঋতুরাজ বসন্ত। মানে সেদিনই হবে পয়লা ফাল্গুন। আর বসন্তে যেমন ফুল ফুটবে, গাছের পাতা ঝরবে, সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়তে থাকবে। এ কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দু-এক দিন শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড় হতে পারে। কিন্তু শীতকাল বিদায় নিতে না নিতেই কেন এই ঝড় আর শিলাবৃষ্টি?

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ২২ ডিসেম্বর উত্তর গোলার্ধে দিনের ব্যাপ্তি কম থাকে। এই তারিখে রাত হয় দীর্ঘ। এর পরপরই সূর্যের অবস্থান বদলে দিন বড় হতে থাকে। সূর্যের কিরণের তেজ বাড়ে। এর সঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপ এবং পূর্বদিক থেকে বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে বাতাস বয়ে যেতে শুরু করে। পশ্চিমা লঘুচাপ ও পূর্বদিকের বাতাসের সংমিশ্রণ ঘটলে বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। মার্চ মাসে এ ধরনের ঝড়-বৃষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে বজ্রঝড়-বৃষ্টির প্রাক-প্রস্তুতি দেখা যায়।

তাপমাত্রা অবশ্য কয়েক দিন ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে যা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সকালে সেটি ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ শুক্রবার সকালে ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দুদিন রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতাও কমে আসতে পারে।