মাঠে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ৪০০ শিক্ষার্থী

মাঠে তৈরি করা প্যান্ডেলে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ৪০০ শিক্ষার্থী। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। গতকালের ছবি। প্রথম আলো
মাঠে তৈরি করা প্যান্ডেলে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ৪০০ শিক্ষার্থী। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। গতকালের ছবি। প্রথম আলো
>
  • নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে না—এই নীতিমালার কারণে এমন ব্যবস্থা।
  • ভোগান্তি সইতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
  • ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

দেখে মনে হয় বড়সড় কোনো অনুষ্ঠান হবে, তাই স্কুলের মাঠে শামিয়ানা টানিয়ে এবং পাশে কাপড়ের বেড়া দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু না, এই প্যান্ডেলের ভেতরেই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ৪০০ শিক্ষার্থী। এতে শীতের সকালের কুয়াশা, ঠান্ডা বাতাস আর দুপুরের রোদের ভোগান্তি সইতে হচ্ছে তাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

ঘটনাটি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বড়খাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খালি পড়ে আছে ১৫টি কক্ষ। কিন্তু নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে না—এই নীতিমালার কারণেই মাত্র ১৫ ফুট দূরের জাহাঙ্গীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ওই কেন্দ্রে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি বিদ্যালয়ের দূরত্ব বলতে মাঝখানে একটি পাকা সড়ক। বড়খাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সব মিলিয়ে কক্ষ আছে ২০টি। জাহাঙ্গীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কক্ষ আছে মাত্র পাঁচটি। এই বিদ্যালয়ের মাঠেই তৈরি করা হয়েছে ১০০ হাত লম্বা ও ২৪ হাত প্রস্থের একটি প্যান্ডেল। ভেতরে কাপড় দিয়ে বানানো হয়েছে সাতটি কক্ষ। ওপরের শামিয়ানা কুয়াশায় ভিজে আছে। দুটি কক্ষে ওপরের এক পাশে কাপড় নেই। আবার কোনোটির ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢুকছে। এটি তৈরি করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ও বড়খাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজির আহমদ জানান, কেন্দ্রের নাম বড়খাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হলেও পরীক্ষার স্থান (ভেন্যু) হিসেবে উল্লেখ রয়েছে পাশের জাহাঙ্গীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবার এই কেন্দ্রে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে ২৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যান্ডেলে ৪০০ পরীক্ষার্থী ও বাকিরা বড়খাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে। অধ্যক্ষ আরও জানান, এর আগে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে। এবার তাঁর বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী আছে ২৭৫ জন। নীতিমালা অনুযায়ী এই শিক্ষার্থীরা নিজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারে না। আবার জাহাঙ্গীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই বিদ্যালয়ের মাঠে এই প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ নজির আহমদ বলেন, ‘ওপরের নির্দেশেই এবার এটা করতে হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তাঁরা বলেছেন নীতিমালার যেভাবে আছে সেভাবেই হবে।’ জেলার ছাতক উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম তো সবার জন্য এক হওয়া উচিত।’

স্থানীয় সোনালি চেলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এটা দুঃখজনক। প্যান্ডেলে পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা হচ্ছে। অথচ পাশেই একটি বিদ্যালয়ের ভবন খালি পড়ে আছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বৃষ্টি হলে এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলবে কোথায়?’

দুপুর ১২টার দিকে নজির আহমদের কক্ষে বসে কথা বলার সময় এক শিক্ষক এসে অভিযোগ করেন, রোদের কারণে প্যান্ডেলে ভেতরের ছয় ও সাত নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। তখন ওই কক্ষে বসা ছিলেন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের।’

স্থানীয় মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কলেজছাত্র নাজমুল ইসলামের ছোট ভাই পরীক্ষা দিচ্ছে এই কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন ভাইকে নিয়ে এসে প্যান্ডেল দেখে মনে হয়েছিল, এখানে বুঝি ওয়াজ মাহফিল হবে। পরে দেখি পরীক্ষা হচ্ছে। বিষয়টি আমাকে অবাক করছে।’ আরেক অভিভাবক আবদুল মোতালেব বলেন, কেন্দ্রে তো সরকারি লোকজন সারাক্ষণই আছেন। তাহলে মাঠের বদলে ভবনের ভেতরেই তো পরীক্ষা নেওয়া যেত।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী নূরজাহান আক্তার, হুমায়ুন কবীর, তানজিনা আক্তার, রেহেনা বেগম জানায়, প্যান্ডেলের ভেতরে কেমন একটা অস্বস্তি লাগে তাদের। এ ছাড়া সকালে কুয়াশা থাকে। তখন ঠান্ডা লাগে, আবার দুপুরের রোদ মাথায় ধরে। ভেতরে আলোও কম বলে জানায় তারা।

জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।