নতুন চরে বাঘের বসত

সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে নতুন চরে দেখা যায় মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি ইউরেশীয় ঝিনুকখোর। সম্প্রতি তোলা। ছবি: অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান
সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে নতুন চরে দেখা যায় মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি ইউরেশীয় ঝিনুকখোর। সম্প্রতি তোলা। ছবি: অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান
  • ‘বঙ্গবন্ধু চর’ হিসেবে সম্প্রতি নতুন নামকরণ হয়েছে চরটির।
  • চরে গিয়েছিল বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের একটি দল।
  • চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে।
  • বিপন্ন প্রজাতির পাখি চামুচঠুঁটো বাটান ও ইউরেশীয় ঝিনুকখোরের দেখা মিলেছে।

চরের আয়তন চার বর্গকিলোমিটার। হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চরের মাঝখানে। ফলে সেটা বনের সীমানার মধ্যে। বন বিভাগ চায় চরে প্রাকৃতিকভাবে শ্বাসমূলীয় বন গড়ে উঠুক। কিন্তু খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে সেখানে একটি পর্যটনকেন্দ্র করার আবদার করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সেখানে একটি স্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়ে যখন রশি টানাটানি চলছে, তখন জানা গেল সেখানে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার বসত গড়ে নিয়েছে।

চরে বাঘের পায়ের ছাপ
চরে বাঘের পায়ের ছাপ

‘বঙ্গবন্ধু চর’ হিসেবে সম্প্রতি নতুন নামকরণ হওয়া ওই চরে গিয়েছিল বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের একটি দল। সেখানে তাঁরা বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন। এলাকার জেলেদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জেনেছেন, ওই চরে একাধিক বাঘ নিয়মিত বসতি গড়ে তুলেছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে বিপন্ন প্রজাতির পাখি চামুচঠুঁটো বাটান ও ইউরেশীয় ঝিনুকখোরের দেখা পেয়েছেন তাঁরা।

চরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে ইরাবতী ডলফিনের একটি বিশাল দলকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ দলটি। মূলত ডলফিন জরিপের অংশ হিসেবে তাঁরা সুন্দরবনের ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। ওই চর থেকে সবচেয়ে কাছের বনটির দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। চরটির অর্ধেক এলাকাজুড়ে কাদা চর ও বাকি এলাকায় শ্বাসমূলীয় বৃক্ষের বন গড়ে উঠেছে।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ দলটির প্রধান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান প্রথম আলোকে বলেন, চরটির আকৃতি কিছুটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কাদা চর থাকায় সেখানে বেশ কিছু সামুদ্রিক পাখি বসতি গাড়তে শুরু করেছে। হরিণ ও শূকরের বেশ কয়েকটি পালও রয়েছে সেখানে। ফলে বাঘ সেখানে বসতি গড়তে শুরু করেছে। সরকারের উচিত হবে ওই বনে অন্য কোনো অবকাঠামো গড়ে উঠতে না দেওয়া এবং এটি শুধু বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা।

এর আগে ২০১৫ সালে কোস্টগার্ড থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী নৌযান ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজের নিরাপত্তা দিতে বঙ্গবন্ধু চরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানোর আবেদন করা হয়। তারা চরটিকে ‘সরোয়ার স্যান্ড দ্বীপ’ উল্লেখ করে তার বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও পৃথক আবেদন করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দেওয়া চিঠিতে কোস্টগার্ড বলেছে, সমুদ্র এলাকায় অপরাধের ধরন বদলে গেছে। তাই ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় লং রেঞ্জ আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাকিং (এলআরআইটি) ব্যবস্থা স্থাপন করা প্রয়োজন। তা ছাড়া জাহাজের নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ডের তৎপরতা বাড়াতে হবে।

এ ব্যাপারে বন বিভাগের খুলনা বিভাগের বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই চরটি প্রাকৃতিক ও প্রশাসনিক দুভাবেই বন বিভাগের আওতায় রয়েছে। সেখানে যাতে বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী নির্বিঘ্নে বসতি গড়তে পারে, সে উদ্যোগ বন বিভাগ চালিয়ে যাবে।