আবার চাঁদাবাজির অভিযোগ

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্থানীয় কাউন্সিলর ও মার্কেট দুটির সভাপতি ময়নুল হক ওরফে মঞ্জু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। মার্কেট দুটিতে অরাজকতা বিরাজ করছে।

গত ৩১ জানুয়ারি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১০–এর কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন ২৪ জন ব্যবসায়ী। এর আগে এই চাঁদাবাজির অভিযোগে ওয়ারী থানায় অনেকগুলো মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তাঁরা। অবশ্য ময়নুল হক চাঁদাবাজির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে র‍্যাব-১০–এর পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আবেদন এখনো আমার হাতে আসেনি। এলে তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই দুটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১১ সালে মনোনয়নের মাধ্যমে রাজধানী সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হন ময়নুল হক। সভাপতি হওয়ার পর তিনি রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান থেকে প্রতি মাসে জেনারেটর বিল বাবদ ৩ লাখ ১২ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করা শুরু করেন। আবার বিদ্যুতের জন্য সরকারি বিলের চেয়ে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি ওঠানো হয়। মার্কেট দুটির চারপাশে ফাঁকা জায়গা ও পার্কিংয়ে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে সেখান থেকেও প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এই হিসাবে গত সাত বছরে এই তিনটি খাত থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়েছে।

এ ছাড়া এই দুটি মার্কেটে এসি বয়লার বাবদ ১৭ কোটি ৮৮ লাখ, বিদ্যুতের লোড বাড়ানো বাবদ ১৭ লাখ ৮৮ হাজার, পানি ও হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ১ কোটি ৪৪ লাখ, মার্কেট মসজিদে মুসল্লিদের দানের ২৪ লাখ টাকার হিসাব না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলর ময়নুল হকের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, চার বছর ধরে এই মার্কেটে বিদ্যুতের লোডশেডি নেই। অথচ জেনারেটরের তেল বাবদ আগের মতোই টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিদ্যুতের সরকারি মূল্য প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে ১৩ টাকা হারে। এসির জন্য তিন বছর আগে টাকা নেওয়া হলেও মার্কেটে এসি লাগানো হয়নি। এতে গরমকালে ক্রেতা কমে যায়। বর্তমানে অবৈধ দোকানপাটের কারণে মার্কেট দুটির পরিবেশ বেশি নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে রাজধানী মার্কেটে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১০ জন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিমও ছিলেন। কিন্তু ওই সময় রাজনৈতিক চাপে রেজাউল করিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে সাজাপ্রাপ্তরা জামিনে বের হয়ে আবার চাঁদাবাজি শুরু করেন। এখন তাঁদের মধ্য থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুলের লোক হিসেবে পরিচিত প্রদীপ তালুকদার, মোটা বাবু, টুন্ডা সায়েম, কানা সাইদুল, নাজমুল ও জাফর সানি চাঁদাবাজিতে সক্রিয় আছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে যেকোনো দিন অভিযান চালানো হবে।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের সীমানার ভেতর ফাঁকা জায়গা ও বাইরে দেড় শতাধিক অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। এতে মার্কেটের ভেতর গাড়ি পার্ক করার জায়গা নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি ও পিকআপ রাস্তার ওপরই রাখছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ডিএসসিসির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই দুটি মার্কেটের ভেতর কোনো অবৈধ দোকানপাট নেই। আর ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকার মার্কেটের সমপরিমাণ বিদ্যুৎ বিল নেওয়া হয়। দিনে দু-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং থাকায় জেনারেটরেরও দরকার হয়। তাই এই খাতে দোকানিদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়। টাকা অবশিষ্ট থাকলে তা দিয়ে মার্কেটের উন্নয়নকাজ করা হয়। এ পর্যন্ত কী কী উন্নয়নকাজ করেছেন—জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।