'মন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললে সেটাও ফাঁস হতে পারে'

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, ‘এই পরীক্ষা নিরাপদ রাখতে মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, এবার তা-ই করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করলে কেউ রেহাই পাবে না। কী হবে আমি নিজেও বলতে পারি না। তবে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ রকম হুঁশিয়ারির পরও মানিকগঞ্জে ফাঁস হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজির প্রশ্নপত্র।

এ বিষয় সম্পর্কে প্রথম আলো ফেসবুকের পক্ষ থেকে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রায় এক হাজার পাঠক সেখানে তাঁদের মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অব্যাহত ঘটনার মধ্যে গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। পয়েন্ট অব অর্ডারে এই দাবি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বানও জানান।

পাঠক অমিত ঘোষ খানিকটা রসিকতা করেই লিখেছেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে চাই না। কারণ, তাঁর মন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললে সেই প্রশ্নও ফাঁস হওয়ার ভয় আছে।’

মো. মতিউর রহমান লিখেছেন, ‘মোটামুটি সবকিছুরই ভালো এবং মন্দ দুটি দিক থাকে। তাহলে নিশ্চয় প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও আছে। আসুন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কিছু ভালো দিক খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি। প্রথমত, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফলে ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটিও ভালো রেজাল্ট করতে পারে, যা তাকে পরবর্তী উচ্চশিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করবে। সে ছাত্র ভবিষ্যতে ভালো চাকরি-বাকরি করে জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রত্যন্ত বা শহরে অঞ্চলে যারা প্রশ্ন বিলি করে, তাদের সাময়িক সময়ের জন্য হলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এতে দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা বেকারত্ব কিছুটা হলেও লাঘব হয়। তৃতীয়ত, যে ছাত্রটি বারবার ফেল করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবার পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে, সেই ছাত্রটিও ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন সংগ্রহ করে আজ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে। যা ছাত্রদের ঝরে পড়াকে অনেকাংশে রোধ করতে পেরেছে।’

জামি ভূঁইয়া নিজেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী দাবি করে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা তো আমাদের মতো অনেক এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির ক্ষতি করে দিচ্ছে। আমাদের পড়ালেখার চরম ক্ষতি করে দিচ্ছে কোচিং বন্ধ করে।’ তিনি মনে করেন, কোচিং বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি।

রাশিদ শেখ দিয়েছেন ভিন্ন পরামর্শ। তিনি লিখেছেন, ‘প্রশ্ন ছাপানো থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছানোর কাজটা সেনাবাহিনীর ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। তারপর দেখা যাবে, তখন কি স্বচ্ছতা থাকে, নাকি আবারও ফাঁস হয়ে যায়?’

প্রশ্নফাঁস বন্ধে অভিনব এক উপায় বাতলেছেন শাখাওয়াত হোসাইন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রশ্নফাঁস হয়তো বন্ধ করা যাবে না, তবে এর ক্ষতি থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর জন্য একটি পদ্ধতি নেওয়া যেতে পারে: শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু লোক নিয়োগ করে ভুয়া ২০/২৫ সেট প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেবে। আসল ও ভুয়া মিলে অনেকগুলো প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের (যারা ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের জন্য বসে থাকে) হাতে পৌঁছাবে। এবার হয় তারা বিভ্রান্ত হবে, নতুবা সব সেট প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে হলে যেতে হবে। এর ফলে একসময় ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের জন্য শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে না; আর যে বসে থাকবে, সে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের সঙ্গে নিজেও ফেঁসে যাবে। মোদ্দা কথা, কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হবে।’

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়ায় এটি থামানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন রিয়াজ উদ্দিন বাবলু। তিনি লিখেছেন, ‘স্লোগান নয়, প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর কিছু করতে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। প্রশ্নফাঁস জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে।’

মোকতার হোসাইন লিখেছেন, ‘শিক্ষাই নাকি জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ডকে ভেঙে দিয়ে জিপিএ-৫ বাড়ানোর গভীর চিন্তায় সবাই মগ্ন। কী হবে সেই জিপিএ-৫ দিয়ে?’

সাদ্দাম হোসেইন লিখেছেন, ‘সরষের মধ্যেই যখন ভূত থাকে, তখন অন্য কোনো কিছুতেই ভূত তাড়ানো যায় না। শিক্ষামন্ত্রীর উচিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা।’

শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে শাহরিয়ার শিমুল লিখেছেন, ‘যেহেতু ওনার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব, সেটা উনি করেছেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে ওনার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়।’

ওবায়দুর রহমান বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে তাঁর মতামত লিখেছেন, ‘কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং সেই জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নকল বা প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে। কারণ, এভাবে পরীক্ষা দিয়ে তৈরি হওয়া ডাক্তারদের হাতে রোগীর মৃত্যু হবে, ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা দালানকোঠা, ইমারত ধ্বংস হবে এবং অর্থনীতিবিদদের দ্বারা দেশের আর্থিক খাত দেউলিয়া হবে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মানে হলো একটি জাতির অবলুপ্তি।’

নিজেদেরই আত্মসচেতন ও সৎ হতে হবে মনে করেন মৌনতা মাহি। তিনি লিখেছেন, ‘কেউ যদি এমন করে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়, তাতে শিক্ষামন্ত্রীর দোষ কোথায়? আমরা সবাই চোর—এটা সবার মাথায় রাখা উচিত। কাউকে বলার সময় আমরা অনেক বেশি বলে ফেলি, কিন্তু নিজে চোর—এটা শিকার করি না।’