মেসে-বাসে তল্লাশি, সাত শতাধিক গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল বিকেলে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল বিকেলে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়।
>
  • রাজধানীতে ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার।
  • ২৬ জেলায় গ্রেপ্তার ৫৯৬।
  • আট দিনে গ্রেপ্তার ১৭৮৬।

বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের পাশাপাশি এখন বাস, মেস ও হোটেলগুলোকে নজরদারির আওতায় এনেছে পুলিশ। সোমবার রাত থেকে সারা দেশে যানবাহন, মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযান শুরু হয়েছে। এক দিনে রাজধানীতে ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। এঁদের মধ্যে ৪৫ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ঢাকার বাইরের ২৬ জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৯৬ জনকে। সব মিলে গতকাল গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২১। আর গত আট দিনে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ৭৮৬ জন।

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান গতকাল থেকে নিখোঁজ।

সিলেট থেকে ফেরার পর তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য পরিচয়ে হাবিব-উন-নবী খানকে তুলে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি সরকারপ্রধানের ইচ্ছা পূরণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘বেপরোয়া উন্মত্ততায়’ বিএনপির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সাত দিনে বিএনপির ১ হাজার ৩০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যা করছে তা রুটিন কাজ। বিশেষ অভিযানের নামে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

ঢাকায় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিচারের রায় পক্ষে বা বিপক্ষে গেলেও ঢাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সমাবেশ বা মিছিল করতে দেওয়া হবে না। ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ঢাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ অবস্থান নেবে। এক পুলিশ কর্মকর্তা রসিকতা করে বলেন, ‘ওই দিন যে পরিমাণ পুলিশ রাস্তায় থাকবে, রাস্তায় নামার জন্য ঢাকায় বিএনপির অত নেতা-কর্মী নেই।’

ঢাকায় প্রবেশ করা যানবাহনগুলোর যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, গতকাল ঢাকায় ঢোকার মুখে দূরপাল্লার গাড়িগুলোকে জায়গায় জায়গায় থামিয়ে পুলিশ তল্লাশি করেছে। সন্দেহজনক যাত্রী পেলেই তাকে নামিয়ে নিয়ে যায়। একইভাবে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও মেসে পুলিশ তল্লাশি চালায়।

জানা গেছে, পূর্ব রামপুরার একটি মেস থেকে সোমবার রাত পৌনে ১২টার সময় সাতজনকে তুলে আনে পুলিশ। ইউটিলিটি প্রফেশনালস নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দুই অল্পবয়স্ক প্রকৌশলীও ছিলেন ওই সাতজনের মধ্যে। পরে বেলা একটার দিকে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়।

প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি রামপুরা থানায় যান। পুলিশ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করে তাঁর দুই কর্মী জামায়াত-শিবিরের কর্মী। পুলিশ ওই তরুণ প্রকৌশলীদের কম্পিউটার, মুঠোফোন, প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রও কেড়ে নেয়। পরে দুপুরের দিকে তাঁদের ছেড়ে দেয়।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল গ্রেপ্তার করা ১২৫ জনের মধ্যে ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 ঢাকার বাইরে

পুলিশের চলমান গ্রেপ্তার অভিযানে গতকাল ঢাকার বাইরের ২৬ জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৯৬ জনকে। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয়, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সাবেক সাংসদ ও জামায়াতে ইসলামীর জেলা কমিটির নায়েবে আমির মুহাদ্দিস আবু সাঈদ আটক হয়েছেন। বগুড়ার কাহালু, দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০ জন। তাঁদের মধ্যে আদমদীঘির সান্তাহার পৌর বিএনপির সভাপতি ফিরোজ মো. কামরুল হাসান রয়েছেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলীসহ শেরপুরে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনজন। বরগুনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রামেদুল ইসলাম, আমতলী পৌর ছাত্রদলের সভাপতি ইসরাত শাহ আল আমিন ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল মাঝিকে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন।

রংপুরে বিএনপির ৯০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন মিয়া রয়েছেন। মুন্সিগঞ্জে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮। তাঁদের মধ্যে গজারিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মান্নান মিয়াজি, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম রয়েছেন।

নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৪ জন।

মাদারীপুরে আটক হয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর হোসেন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দুলাল ব্যাপারী, কালকিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক ব্যাপারী, কালকিনি উপজেলা জামায়াতের সভাপতি আবদুস সালাম ও কালকিনি পৌর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সেলিম আহমদসহ সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন। এ ছাড়া জেলা সদরে ৪, ছাতকে ৩, দোয়ারাবাজারে ৩, বিশ্বম্ভরপুরে ৩, দিরাইয়ে ২, জামালগঞ্জে ৩ এবং শাল্লা উপজেলায় ১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন। গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের আমির মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রয়েছেন তাঁদের মধ্যে।

জামালপুরে ৪৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মো. নবাব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক এস এম জসিম উদ্দিন, সাতকানিয়া পৌরসভা জামায়াতের আমির মো. ওয়াজেদ আলী, কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাহামুদুল হক, বাজালিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আবদুস সালামসহ ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোহসিন খানসহ বোয়ালখালীতে ৫ জন, রাউজানে ৪ জন, পটিয়ায় ২১ ও সীতাকুণ্ডে ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বাগেরহাটে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৫৪ জন। এর মধ্যে চিতলমারী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, কচুয়ার গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান সিকদার এবং ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রয়েছেন।

১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন পঞ্চগড়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট ও সদরে ৪ জন, নীলফামারী সদরে ১১ জন, ডোমারে ২ জন, ডিমলায় ৫ জন, জলঢাকায় ৬ জন, কিশোরগঞ্জে ৫ জন এবং সৈয়দপুরে ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফেনীর সোনাগাজীতে গ্রেপ্তার হয়েছেন আমিরাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সফি উল্যাহ।

খাগড়াছড়ি জেলা কৃষক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিজানুর রহমান, মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহালছড়ি উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি মো. নবী, পানছড়ি উপজেলা সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আওলাদসহ জেলায় ৩৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সাতক্ষীরা সদরে ২৫ জন, কলারোয়ায় ৬, তালায় ৪, কালীগঞ্জে ৮, শ্যামনগরে ১৩, আশাশুনিতে ৫, দেবহাটায় ৭, পাটকেলঘাটায় ৪ জনসহ জেলায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৭২। এর মধ্যে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরজেদ ও তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক নাসির রয়েছেন। কালিহাতী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমানসহ টাঙ্গাইলে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩ জন।

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম, জেলা যুবদলের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শহীদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, জেলা বিএনপির সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মো. আবুল হোসেনসহ ১৭ জন আটক হয়েছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান, ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আপেল মণ্ডল জেলায় মোট ২০ জন আটক হয়েছেন। রাজবাড়ী জেলায় আটক হয়েছেন ৪৪ জন। এ ছাড়া জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ১ জন, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ১২ জন, ঝিনাইদহে ১ জন এবং রাজশাহীতে ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।