'আলাদা লেন অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক'

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জরুরি সেবার যানবাহন ও ভিআইপিদের চলাচলের জন্য রাজধানীর রাজপথে আলাদা লেন করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া চেয়ে প্রথম আলো ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়। বেশির ভাগ পাঠক এ প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক বলছেন, কেউ কেউ উপহাস করে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছেন। যেমনটা নাসির উদ্দিন কয়েকটি লেনের প্রস্তাব দিয়ে লিখেছেন, 

‘একটি লেন—ভিভিআইপিদের জন্য (দেশি-বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান)
দ্বিতীয় লেন—ভিআইপিদের জন্য (দেশি-বিদেশি মন্ত্রী)
তৃতীয় লেন—রাজনৈতিক নেতাদের জন্য (দলীয়)
চতুর্থ লেন—আমলাদের জন্য (ডিসি, এসপি টাইপ)
পঞ্চম লেন—যাদের পরিচিত নেতা আমলা আছে (যাদের কথায় মনে হয় ডিসি-এসপিরা ওঠে-বসে)
ষষ্ঠ লেন—ইমারজেন্সি সার্ভিস (অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার, পুলিশ)
সপ্তম লেন—বাইকারদের জন্য (ফুটপাতসহ)
অষ্টম লেন—হকারদের জন্য’
মন্তব্যের নিচে ইব্রাহীম হীরাও উপহাস করে জানতে চেয়েছেন, তাহলে জনসাধারণেরা কোন লেন দিয়ে যাতায়াত করবে?
শাহজাহান আলী জানতে চেয়েছেন, পকেটমারদের জন্য কোন লেন?
আদনান হৃদয় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এর চেয়ে উপায় হলো এই ঢাকায় ভিআইপিদের রেখে, আমাদের সাধারণ জনগণকে বের কিরে দিন। তাহলেই ঝামেলা শেষ। সত্যি যদি কিছু করতে চান, তাহলে সাধারণ মানুষদের জন্য কিছু করেন। কারণ, এরাই এ দেশের অর্থনীতির মূল উৎস।’
সাদ্দাম হোসেইন সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা না করে ট্রাফিক-ব্যবস্থাকে আরও প্রযুক্তি নির্ভর করা দরকার। তা ছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা ফুটপাতের হকার ও বিভিন্ন মার্কেট মালিকদের দখলে। এ অবস্থায় আলাদা লেন তৈরিতে পর্যাপ্ত জায়গা ঢাকাতে নেই বললেই চলে। অতএব প্রস্তাবিত উদ্যোগ বাতিল করা হোক।’
মুক্তো হাসান লিখেছেন, ‘যদি প্রস্তাবিত মেট্রোরেল হয়ে যায়, তাহলে রাজপথে প্রেশার কমে যাবে, সরকারের শেষ সময়ে এসে এই কাজে হাত দিলে অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ারও একটা ঝুঁকি থাকে। বরং এই অর্থ ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা নেতাদের মধ্যে। আর আমাদের দেশে একজন ওয়ার্ড সভাপতি ও ভিআইপি মর্যাদা পেতে চায়। তখন ট্রাফিক পুলিশ ও ভিআইপি চিনতে ঘাম ঝরাতে হবে। সুতরাং আলাদা লেন না করে ওই অর্থ দিয়ে অবৈধ স্থাপনা পরিষ্কার করে পুরোনো রাস্তা মেরামত করাটাই শ্রেয়।’
অনেক পাঠকই ভিআইপিদের আকাশপথ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘যদি অবাধে চলাচল করতে পারাই তাঁদের চাহিদা হতো, তবে তাঁরা হেলিকপ্টারে চলাচল করতে পারেন! কিন্তু সেটা তাঁরা করছেন না, তাঁরা মানুষকে কষ্ট দিয়ে বোঝাতে চান যে তাঁরা ভিআইপি। একই সঙ্গে ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক। তাঁদের ভাবা উচিত কীভাবে সড়কপথ যানজটমুক্ত করা যায়, অথচ তাঁরা ভাবছেন কীভাবে নিজেরা আগে যেতে পারবেন!’
মো. আল আমিনেরও একই মত। লিখেছেন, ‘আপনারা যাঁরা ভিআইপি, তাঁরা বরং আকাশপথে চলাচল করুন, মানে হেলিকপ্টারে চড়ে আরামে ঘুরে বেড়ান, তাহলে সময় ব্যয় হবে না।’
খালেদ আহমদ সুমন ভিআইপি লেন না করে ইমার্জেন্সি লেন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ইমার্জেন্সি লেন করা হোক, যে লেন দিয়ে জরুরি সেবার যানবাহন আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলাচল করবে। পাশাপাশি ভিআইপি হিসেবে কারা চলাচল করবে তার নির্দিষ্ট একটি তালিকা তৈরি করা উচিত। আমার মতে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ আর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ এই ভিআইপিদের আওতায় হবেন। এর বাইরে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাগণকে ভিআইপিদের আওতায় আনা যেতে পারে, তবে তাঁরা শুধু তাঁদের কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি লেন ব্যবহার করবেন, তাঁদের ব্যক্তিগত চলাফেরার জন্য নয়।’

সাফায়েত হোসেইনের মতে, ভিআইপি লেনের এই প্রস্তাব প্রমাণ করে বৈষম্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে দেশ।
মো. রাশেদ হোসেইনের মতে, এ প্রস্তাবের উদ্দেশ্য গুটি কয়েক লোকের স্বার্থ অর্জন।
তোফাজ্জল হোসেনের মতে, সাধারণ জনগণের ভোটে এমপি, মন্ত্রীরা ভিআইপি হিসেবে গণ্য হন। যাদের কারণে ভিআইপি হন, তাঁদের অবহেলা করা ঠিক হবে না।
ভিআইপি লেনকে খুবই হাস্যকর ও বেদনাদায়ক প্রস্তাব হিসেবে বলছেন তরিকুল ইসলাম।

ভিআইপি লেনের পক্ষে যে একেবারে কোনো মন্তব্য পড়েনি, তা নয়।
পঙ্কজ দাস লিখেছেন, ‘যদি আলাদা লেন তৈরির মাধ্যমে জনগণের দুর্ভোগ লাগব হয়, তাহলে ঠিক আছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীদের চলাচলের জন্য সাধারণ জনগণকে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন সময় আটকে থাকতে হয়। তা ছাড়া জরুরি সেবা যেমন ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স সেবা দ্রুত নিশ্চিত করা দরকার। তবে মাথায় থাকতে হবে সবার ওপরে জনগণ, ভিআইপি নয়।’
সুভাস চন্দ্র লিখেছেন, ‘এই উদ্যোগটি খারাপ নহে। তবে সকল মহানগরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা দরকার। অন্ততপক্ষে একই সময়ে এক স্পটে একই রুটের একাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে না থাকা, পোয়া কিলোমিটারের ভেতর গাড়িস্টপ না করা, তদুপরি ওভার টেকিং বন্ধ করা, এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশগণের কঠোর হওয়া উচিত।’
হাফিজ রহমানের সোজাসাপ্টা কথা, ‘প্রত্যেকটা মানুষের তার নিজস্ব সময়ের মূল্য আছে। শুধু ভিআইপিদের সময়ের মূল্য আছে তা নয়।’
খান তারেকের মতে, আলাদা লেন হতে পারে শুধু ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য; ভিআইপিদের জন্য নয়।