মায়ের স্বপ্ন নিয়েই পরীক্ষা দিতে গেল সে

তিনি স্বপ্ন দেখতেন তাঁর ছেলে পড়াশোনা করে একদিন মস্ত বড় হবে। ছেলের সাফল্যে হাসি ফুটবে তাঁর মুখে। কিন্তু সেই মা ভুগছিলেন কিডনি রোগে। গত মঙ্গলবার রাতে ইন্তেকাল করেছেন। গতকাল বুধবার সকালে মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে বুকে পাষাণ বেঁধে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে যায় তাঁর সেই ছেলে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঘটেছে এ ঘটনা। ছেলেটির নাম সোহানুর রহমান। গতকাল ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। কেন্দ্রে বসে বারবার চোখ মুছতে মুছতে পরীক্ষা দেয় সে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহানুরের মা সেলিনা বেগম (৪০) কিডনি রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মা হারানোর ব্যথায় কাতর সোহানুর পরীক্ষায় বসতে চাইছিল না। স্বজনেরা তখন তাঁর মায়ের স্বপ্নের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। শোককে শক্তিতে পরিণত করে পরীক্ষায় বসার উৎসাহ জোগান। সকালে ধুনট এনইউ পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ভেন্যু কেন্দ্র ধুনট সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেয় সোহানুর। সে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চকধলী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। এ বছর সে জালশুকা মোজাহার আলী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা এক ভাই এক বোন। শোক সংবাদ শুনে পরীক্ষার কেন্দ্রে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা ও নির্বাহী হাকিম জগৎ বন্ধু মণ্ডল। পরে একটুক্ষণ তাঁরা সোহানুরের পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দেন। এ সময় সোহানুরের চোখ ফেটে অঝোরে কান্না ঝরতে থাকে। এতে কক্ষের অনেকের চোখ ভিজে আসে। পরে তাঁরা সোহানুরের ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়া এবং তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন।

পরীক্ষার কেন্দ্রে বসে সোহানুর বলে, ‘মায়ের বড় আশা ছিল আমি যেন ভালোভাবে লেখাপড়া করি। বড় হয়ে তাঁর মুখ উজ্জ্বল করি। মা এমন করে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন। জানি, কেঁদে কেঁদে আর পাব না তাঁকে। তবে তাঁর স্বপ্নপূরণের চেষ্টা আমি করব। ভালোমতো লেখাপড়া করব বলে তাঁকে কথা দিয়েছিলাম। আমি সে কথা রাখার চেষ্টা করব। এ জন্যই মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসেছি।’’

ইউএনও বলেন, ‘এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। শোকগ্রস্ত ছেলেটির খোঁজখবর নিতে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাই। তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে আসি।’