বাক্সবন্দী আগুনের গায়ে জীবন্ত ইতিহাস

নিজের সংগ্রহশালায় সাকিল হক। হাতে িবশ্বের সবচেয়ে বড় দেশলাই বাক্স ।  ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
নিজের সংগ্রহশালায় সাকিল হক। হাতে িবশ্বের সবচেয়ে বড় দেশলাই বাক্স । ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
>
  • মোহাম্মদপুরে মায়ের বাসায় সংগ্রহশালা।
  • দেশের প্রথম দেশলাই সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা।
  • ২৬-২৮ এপ্রিল দৃক গ্যালারিতে ম্যাচ বক্স প্রদর্শনী।

মাত্র পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা ভারতের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ম্যাচ বা দেশলাই বাক্স থেকে শুরু করে পোল্যান্ডের তৈরি বিরাটকায় ম্যাচ বক্স। রাশিয়ার তৈরি দুই হাজার কাঠির ম্যাচ বক্স থেকে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ বক্স—সব মিলে সংগ্রহটা বিরাট। নিজেও নকশা করেছেন ডেনমার্কের জন্য একটিসহ মোট ৬২টি ম্যাচ বক্স।
সাকিল হকের পরিচয় তাই এখন ম্যাচ বক্স ডিজাইনার ও সংগ্রাহক। আদতে তিনি চিত্রশিল্পী, গ্রাফিক ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।
সাকিল হকের সংগ্রহে রয়েছে ১২৮টি দেশের প্রায় ১৭ হাজার ম্যাচ বক্স। এর প্রতিটি বিভিন্ন সময় বা অধ্যায়ের ইতিহাসও। ঘরের কাচের আলমারি, টেবিল, বয়াম সব জায়গায় এই দেশলাইয়ের বক্স। ২০১২ সাল থেকে তিনি এগুলোর সংগ্রাহক। বাংলাদেশ ম্যাচ বক্স কালেক্টরস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টও তিনি। এখন এই ক্লাবের সদস্যসংখ্যা ৩৮।
মোহাম্মদপুরে সাকিল হক তাঁর মা রোকেয়া বেগমের বাসায় সংগ্রহশালাটি সাজিয়েছেন। তাঁর অন্যতম পরিকল্পনা হলো দেশের প্রথম দেশলাই সংগ্রহশালা বা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা।
সাকিল হক এখন ম্যাচবক্সে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ থেকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত ধারাবাহিক ইতিহাস তুলে ধরার কাজ করছেন। আগামী ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল দৃক গ্যালারিতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছেন ম্যাচ বক্স প্রদর্শনী।
১৮৬০ সালে সুইডেনের তৈরি ক্যাপসুল ম্যাচ বক্স, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ম্যাচ বক্স, ভিনটেজ উডেন ম্যাচ বক্স, প্লাস্টিকের ম্যাচ বক্স, টিনের ম্যাচ বক্স, তাঁবু আকৃতির ম্যাচ বক্স, বারবিকিউ ম্যাচ বক্স, ফায়ার প্লেস ম্যাচ বক্স, সিলিন্ডার ম্যাচ বক্স, বাড়িতে ব্যবহারের জন্য হাউসহোল্ড ম্যাচ বক্স, এমব্রয়ডারি করা ম্যাচ বক্স, টাইল ম্যাচ বক্স, বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট থিমের ম্যাচ বক্সসহ নানা রকম ও আকৃতির ম্যাচ আছে সাকিল হকের কাছে। ১৯১৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানদের ছবি দিয়ে তৈরি ম্যাচ, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন নাট্যাভিনেতার ছবি দিয়ে তৈরি ম্যাচ বক্সও আছে। দেশি-বিদেশি সংগ্রাহকদের সঙ্গে
আদান-প্রদানের মাধ্যমেই তাঁর এ সংগ্রহশালার বিস্তৃতি ঘটছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশলাই, বিশ্বে বড়সড় সব দেশলাই বাক্স,দ্য ম্যাচ গার্ল স্ট্রাইক, ১৮৮৬ সাল, লন্ডনের রাস্তায় খুদে দেশলাই বিক্রেতা, ১৮৮৪, সাকিল হকের নকশা করা বাংলার রং সিরিজের দেশলাই বাক্স
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশলাই, বিশ্বে বড়সড় সব দেশলাই বাক্স,দ্য ম্যাচ গার্ল স্ট্রাইক, ১৮৮৬ সাল, লন্ডনের রাস্তায় খুদে দেশলাই বিক্রেতা, ১৮৮৪, সাকিল হকের নকশা করা বাংলার রং সিরিজের দেশলাই বাক্স

১৮২৬ সালে ইংল্যান্ডের জন ওয়াকার দেশলাই আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম আগুনকে বাক্সবন্দী করেন। তখন লম্বা টিনের কৌটায় ছিল দেশলাইয়ের কাঠি। ১৮৮৬ সালে ম্যাচ কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, ন্যায্য মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘দ্য ম্যাচ গার্ল স্ট্রাইক’ নামের সফল আন্দোলন হয়। সাকিলের নকশা করা ম্যাচ বক্সে জন ওয়াকার, ম্যাচ গার্লদের ছবি ও ইতিহাস স্থান পেয়েছে।
সাকিল হকের বাবা খন্দকার আজিজুল হক সংগ্রাহক ছিলেন না, তবে ছিলেন শৌখিন মানুষ। তিনি ম্যাচসহ বিভিন্ন জিনিস বড় টেবিলের কাচের নিচে জমাতেন। সেই স্মৃতিই তাঁকে সংগ্রাহক হতে সাহায্য করেছে।
একপর্যায়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান সাকিল হক। দেশে ফেরেন ২০১২ সালে। কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের সহায়তায় ১৫ দিনে ২৫২টি ম্যাচ সংগ্রহ করেন। ইন্দো-বাংলা ম্যাচ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইন্দোনেশিয়ার হরতনোর সঙ্গে যোগাযোগের পর একসময় আকিজ গ্রুপ, জামিল গ্রুপ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ২০১৫ সালে ‘বাংলার রঙ’ শিরোনামে ১২টি ম্যাচ ডিজাইন করে সম্মানীও পান সাকিল হক। গত বছর করেন ২০টি ম্যাচের ডিজাইন।
সাকিল হকের আফসোস, বিভিন্ন দেশ নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরেছে ম্যাচ বক্সে। কিন্তু বাংলাদেশের ম্যাচ কারখানার মালিকেরা এ বিষয়ে উদাসীন।
ম্যাচ সংগ্রহে উৎসাহী ব্যক্তিরা সাকিল হকের ওয়েবসাইটে (matchboxmuseum.blogspot.com) গিয়ে দেখতে পারেন। যোগাযোগও করতে পারেন তাঁর সঙ্গে।