ভোগান্তির শেষ কবে?

ম্যানহোলের মুখ দিয়ে পয়োনালার পানি উপচে জমে আছে রাস্তায়। গতকাল উত্তর বাড্ডার পূর্বপাড়া সড়কে। প্রথম আলো
ম্যানহোলের মুখ দিয়ে পয়োনালার পানি উপচে জমে আছে রাস্তায়। গতকাল উত্তর বাড্ডার পূর্বপাড়া সড়কে। প্রথম আলো

শুষ্ক মৌসুমেও তিনটি সড়কে ভাসছে পয়োনালার বর্জ্য। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে। জানা গেল, সড়কগুলোতে বর্ষায় পানি জমে কোমর পর্যন্ত। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে আশপাশের বসতবাড়ি।

এ ছাড়া এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা। চারদিকে ধুলাবালুর রাজত্ব। নেই কোনো খেলার মাঠ। সড়কে বাতি নেই। অলিগলিতে মাদকের উৎপাত। সরু রাস্তায় দিনভর যানজট লেগে থাকে।

সড়কের দুই পাশ দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ অটোস্ট্যান্ড, ফলের দোকান, খাবার হোটেল। দীর্ঘদিনেও হয়নি কমিউনিটি সেন্টার। নেই বিনোদন পার্ক।

এই চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের। গত জুলাইয়ে বাড্ডা ইউনিয়নের বাড্ডার (আংশিক), মধ্যপাড়া, মোল্লাপাড়া, আদর্শনগর, উত্তর বাড্ডা পূর্বপাড়া (অংশ-১), বাওয়ালীপাড়া, উত্তর বাড্ডা পূর্বপাড়া (অংশ-২), আবদুল্লাহবাগ, মিছরীটোলা, হাজীপাড়া, উত্তর বাড্ডা মৈনারটেক, সুতিভোলা (আংশিক) এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির নতুন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়। এ এলাকায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। ভোটারসংখ্যা ৬৫ হাজার।

সরেজমিন দেখা যায়, বাড্ডার মধ্যপাড়া, উত্তর বাড্ডা পূর্বপাড়া, মোল্লাপাড়া, আদর্শনগর, বাওয়ালীপাড়া, আবদুল্লাহবাগ এলাকায় পয়োনালার মুখ দিয়ে বর্জ্যমিশ্রিত পানি উপচে এসে সড়ক সয়লাব হচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিক। নালার পানি জমে আছে রাস্তায়। এতে হেঁটে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রায় সময় পয়োনালা বন্ধ হয়ে যায়। তখন নালার বর্জ্য ম্যানহোলের মুখ দিয়ে সড়কে ওঠে আসে। তাঁরা বলেন, পয়োনালাগুলো অনেক দিনের পুরোনো। তাই চাপ নিতে পারছে না। এ ছাড়া দীর্ঘদিন সঠিকভাবে সংস্কারের অভাবে নালার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। নালা নতুন করে সংস্কার করে বড় পাইপ না বসালে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

আদর্শনগরের বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দীন বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকে সামান্য বৃষ্টি হলেই পয়োনালার পানিতে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এখন পুরোনো নালাগুলো সংস্কার করে নতুন নালা স্থাপন করা প্রয়োজন।

ওয়ার্ডটির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, উত্তর বাড্ডার পূর্বপাড়া বড়টেক সড়ক, তেঁতুলতলা সড়ক, পূর্বাচল সড়ক, আবদুল্লাবাগ মেম্বার বাড়ি সড়ক, আবদুল্লাবাগ ২ নম্বর লেন, কেরাম উদ্দিন সড়ক, অ্যাপার্টমেন্ট সড়ক, এগারো সরণি, আদর্শনগর সড়ক, স্বাধীনতা সরণি, ওহাব মোল্লা সড়কসহ ওয়ার্ডের অলিগলি সড়ক ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা। কোথাও পয়োনালা নির্মাণের জন্য রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। কোনো সড়কে নালা নির্মাণকাজের পর রাস্তা ঠিক করা হয়নি। এতে রাস্তা দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

যান চলাচল না থাকায় রাস্তাতেই দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন অনেক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। এ ছাড়া কিছু রাস্তায় জলাবদ্ধতার সময় চলাচলের জন্য রাখা ইট-সুরকিবোঝাই বস্তাগুলো পড়ে আছে।

খেলার মাঠ নেই, তাই খালি প্লটই ভরসা। গতকাল মধ্যপাড়ায়। প্রথম আলো
খেলার মাঠ নেই, তাই খালি প্লটই ভরসা। গতকাল মধ্যপাড়ায়। প্রথম আলো

উত্তর বাড্ডার তেঁতুলতলা সড়কে পয়োনালা নির্মাণে কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এরপর রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। এলাকার বাসিন্দা মো. আমজাদ সরকার বলেন, ‘ছয় মাসের বেশি হলো রাস্তা এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

উত্তর বাড্ডা রূপনগর পল্লি সড়কে ম্যানহোলের মুখ দিয়ে পয়োনালার পানি বের হতে দেখা যায়। বর্জ্যমিশ্রিত কালো পানি প্রবাহিত হচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। এতে পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছিলেন না।

পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মো. আজগর আলী বলেন, প্রায় সারা বছরই সড়কটির এই অংশ দিয়ে নালার পানি ওপরে উঠে আসে। পানি বেশি হলে এলাকার লোকজন নালা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে। তাতে সাময়িক সমাধান হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার একই সমস্যা দেখা দেয়। পুরোনো সরু পাইপ পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এর স্থায়ী সমাধান নেই।

ওয়ার্ডটিতে কোনো খেলার মাঠ নেই। খালি প্লটগুলো খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে কিশোর-যুবারা।

আবদুল্লাবাগের যুবক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই। বিকেল হলে যুবকেরা বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেয়। অনেক সময় দেখা যায় এ রকম আড্ডার জায়গা থেকেই মাদক গ্রহণ শুরু হয়। কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।’

মাদকের বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় মাদকের কোনো নির্দিষ্ট স্পট নেই। ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসা চলে। তবে এর বিরুদ্ধে আমাদের বিভিন্ন টিম নিয়মিত কাজ করছে।’

ডিএনসিসিতে যুক্ত নতুন ওয়ার্ডের উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে সংস্থাটির সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, নতুন যুক্ত এলাকাগুলো জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। এখন সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে) যাবে। সেখানে অনুমোদন পেলে উন্নয়নকাজ শুরু হবে।