ঐতিহ্য দর্শনে কূটনীতিকেরা

পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে ঢাকায় নিযুক্ত ৯টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাঁদের জীবনসঙ্গীরা। প্রথম আলো
পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে ঢাকায় নিযুক্ত ৯টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাঁদের জীবনসঙ্গীরা। প্রথম আলো
>
  •  ‘হেরিটেজ ওয়াক’ নামে ব্যতিক্রমী আয়োজন।
  • কূটনীতিকেরা মুগ্ধ হন নান্দনিক সৌন্দর্যে।

গুলশান-বনানীর কূটনৈতিক মহল্লার বাইরে তাঁদের খুব একটা দেখা যায় না। তবে যানজট উজিয়ে গতকাল সকাল ৯টায় সাড়ে তিন শ বছরের পুরোনো হোসেনি দালানে হাজির ঢাকায় নিযুক্ত ৯টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাঁদের জীবনসঙ্গীরা।

 হোসেনি দালান থেকে হেঁটে চকবাজার শাহি মসজিদ। সেখান থেকে বড় কাটারা ও ছোট কাটারা। ছোট কাটারা ঘাট থেকে নৌকায় চড়ে বুড়িগঙ্গার তীর ধরে তাঁরা পৌঁছে যান ফরাশগঞ্জ এলাকায়। সেখানে বিবিকা রওজা, মঙ্গলালয়, লক্ষ্মী ভিলা, বড়বাড়ি ও মঙ্গল আবাস নামের ঐতিহাসিক ভবনগুলোও ঘুরে দেখেন। বুঝে নেন এগুলোর স্থাপত্যকৌশল। মুগ্ধ হন নান্দনিক সৌন্দর্যে।

‘হেরিটেজ ওয়াক’ নামে এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের উদ্যোগ নেয় আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি) নামের একটি সংগঠন। আর রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাঁদের সঙ্গীদের এক পরিসরে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয় ‘স্পাউস অব হেড অব মিশনস’। এটি ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গীদের (স্বামী/স্ত্রী) একটি গ্রুপ।  

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পরিদর্শন শেষে বিউটি বোর্ডিংয়ে জড়ো হয়ে অতিথিরা এই সফর সম্পর্কে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসিয়ে টিয়েরিঙ্ক বলেন, আমরা যাঁরা গুলশান-বারিধারার মতো সুবিধাপ্রাপ্ত এলাকায় থাকি, নিরাপত্তাজনিত কারণে চাইলেই সেখান থেকে বের হতে পারি না। সেখানকার পরিবেশ অনেকটা খাঁচার মতো। এখানকার (পুরান ঢাকা) মানুষের মনে হয়েছে অনেক আন্তরিক, বন্ধুবৎসল। আপনারা এটাকে পুরান ঢাকা বলছেন। আমি বলব, এটাই আসল ঢাকা।’

সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোটা স্ক্লাইটার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোকে অভিহিত করেন ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো সংরক্ষণে যে সীমাবদ্ধতা আছে, তা অতিক্রম করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।’

স্থাপনার বাইরে স্পেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালভারো ডি সালাস পুরান ঢাকার মানুষের নিত্যকার জীবন সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতার কথা জানান।

বিউটি বোর্ডিংয়ের খোলা চত্বরে এই সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও বক্তব্য দেন ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, ব্রুনেই ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাঁদের কয়েকজন সঙ্গী। তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাষায় ‘পুরান ঢাকাকে রক্ষা করো’ স্লোগান তোলেন। সবশেষে তাঁরা ফরাশগঞ্জের লালকুঠিতে ইউএসজি আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে অংশ নেন।

এই আয়োজন সম্পর্কে ইউএসজির প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা পুরান ঢাকা নিয়ে প্রচারাভিযান চালাচ্ছি প্রায় ১৫ বছর ধরে। দেখেছি, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কিংবা এখানকার মহল্লাগুলো সম্পর্কে মানুষের ধারণা কম। একটা জিনিস স্বচক্ষে দেখার পরেই সেটার প্রতি একটা মমতাবোধ তৈরি হওয়া সম্ভব। এটাই আমাদের মূল জায়গা। এখানকার স্থাপনাগুলো সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা দিতেই এই হেরিটেজ ওয়াকের আয়োজন।’