নগরের সৌন্দর্য আড়াল করে সাইনবোর্ড নয়

• মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে খসড়া বিজ্ঞাপন নীতিমালা।
• নীতিমালায় ২৪টি ধারা রয়েছে।
• এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি।

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোর উন্নয়নে বিজ্ঞাপন খসড়া নীতিমালা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এই নীতিমালা অনুযায়ী, করপোরেশনের অনুমোদিত স্থান ছাড়া সাইনবোর্ড স্থাপন করা যাবে না। নান্দনিক ভবন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আড়াল করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা যাবে না। এমনভাবে বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে যাতে ফুটপাতে পথচারী এবং সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।

অনুমোদনের জন্য এই নীতিমালা গত বছরের ২২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছে করপোরেশন। তবে এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি।

মোহাম্মদ মনজুর আলম সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকা অবস্থায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে চট্টগ্রাম নগরে সব ধরনের বিজ্ঞাপন স্থাপন ও নবায়নের অনুমতি বন্ধ রাখা হয়। আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৬-এর জানুয়ারি থেকে শহরের সব বিলবোর্ড, ডিসপ্লে বোর্ড উচ্ছেদ করেন। তাঁর এই উদ্যোগ সব মহলে প্রশংসিত হয়।

করপোরেশন সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ মার্চ চিঠি দিয়ে বিজ্ঞাপন নীতিমালা তৈরি করার নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ১৭ মে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি অক্টোবরে খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। এই নীতিমালায় ২৪টি ধারা রয়েছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের কোনো বিজ্ঞাপন নীতিমালা নেই।

সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনুমোদনের জন্য নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত অনুমোদনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা তাঁরা পাননি। অনুমোদন পেলে বিজ্ঞাপন স্থাপনের অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নীতিমালায় কী কী আছে:

নীতিমালার প্রথম ধারায় বলা আছে, নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সংযোগগুলোতে উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত দরদাতাকে সাইনবোর্ড, যাত্রীছাউনি, বাসস্টপ ও ডিসপ্লে বোর্ড ইত্যাদি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যাবে। এ ছাড়া অনুমোদিত সাইনবোর্ড এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন রাস্তা বা ফুটপাতে পথচারী বা যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। সাইনবোর্ডের আকার ৮ ফুট বাই ১২ ফুটের বেশি হতে পারবে না। করপোরেশনের অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাইনবোর্ড স্থাপন করা যাবে না।

নান্দনিক ভবন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পুরাকীর্তি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঐতিহাসিক ও সরকারি ভবন আড়াল করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা যাবে না। মাদকদ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। ১০ কোটি টাকার নিচে যেকোনো সৌন্দর্যবর্ধন অথবা নাগরিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদন দেওয়া যাবে এবং এর বেশি হলে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করপোরেশন চুক্তি করতে পারবে।

নীতিমালার আরেকটি ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা সরকারি প্রয়োজনে বা জনস্বার্থে ২৪ ঘণ্টার নোটিশে স্থাপিত সাইনবোর্ড, ডিসপ্লে বোর্ডগুলো স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে অপসারণ করতে হবে। প্রতিটি সাইনবোর্ড বা ডিসপ্লে বোর্ডের ডান পাশের নিচের দিকে প্রতিষ্ঠানের নাম, টেলিফোন নম্বর এবং করপোরেশনের অনুমোদনের নম্বর উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু ঈসা আনছারী প্রথম আলোকে বলেন, নগরের যত্রতত্র বা গণহারে কেউ যাতে সাইনবোর্ড, ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে না পারে সে জন্য নীতিমালার প্রয়োজন আছে। আর এগুলো স্থাপনের স্থান ও আকৃতির বিষয়টি নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এতে সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে। আর নগরের নান্দনিকতা বজায় রাখার জন্য সিটি করপোরেশন স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও চিত্রশিল্পীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিতে পারে।