বারবার একই অপকর্ম

>
  • ৬ ফেব্রুয়ারি ফের ধরা পড়েন ছিনতাইকারী হোসেন।
  • সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিল মাসে হোসেন কারাগারে যান।

যাত্রী বেশে সহযোগীসহ সিএনজি-অটোরিকশা নিয়ে ঘোরেন তিনি। সুযোগ পেলেই করেন ছিনতাই। পথচারী কিংবা রিকশা যাত্রীর গতি রোধ করে কেড়ে নেন টাকা ও মূল্যবানসামগ্রী। তিনি মো. আবুল হাসেম ওরফে হোসেন (৩৬)। তাঁর দলে চালকসহ কখনো তিন, কখনো থাকেন চারজন।

পুলিশের তালিকাভুক্ত এই ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে গত আট বছরে মামলা হয়েছে ১৬টি। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন নয়বার। প্রতিবার গ্রেপ্তার হয়ে চার থেকে ছয় মাসের বেশি কারাভোগ করেননি। জামিনে মুক্ত হয়ে এসে আবার জড়িয়ে পড়েছেন ছিনতাইয়ে। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিল মাসে কারাগারে যান। আর ছয় মাস পর সেপ্টেম্বরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন নগরের বায়েজিদ এলাকায়।

৬ ফেব্রুয়ারি নগরের পাঁচলাইশের পূর্ব নাসিরাবাদে একটি কোম্পানির তিন লাখ টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময় এক সহযোগীসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়েন হাসেম। পিটুনি দিয়ে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই দিন তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন সহযোগী ছিলেন, তবে তাঁরা পালিয়ে যান।

৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের শুরুর দিকে জসীম নামের এক ছিনতাইকারীর মাধ্যমে এই পথে পা বাড়ান। কোতোয়ালি থানার একটি ছিনতাইয়ের মামলায় ওই বছরের ২০ জুলাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। চার মাস পর ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার হয়ে পরের বছরের জানুয়ারি মাসে ডবলমুরিং থানার একটি মামলায় জামিনে আসেন। আবার জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইয়ে।

২০১২ সালের ২৭ জুলাই বায়েজিদ বোস্তামী থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরের বছরের মার্চ মাসে জামিনে মুক্তি পান। এভাবে গত আট বছরে নয়বার কারাগারে যান হাসেম। তাঁর দুই স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।

হাসেম আরও বলেন, প্রতিবার জামিনের জন্য আইনজীবীকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ফি দেন। কখনো জামিনে আসার পর ফি পরিশোধ করেছেন। এক আইনজীবী তাঁকে জামিন করানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করেন বলে জানান।

অটোরিকশা নিয়ে নগরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ব্যাংকের সামনে ঘোরাঘুরি বেশি করেন হাসেম। তিনি বলেন, কখনো আগে থেকে তথ্য থাকে। না হলে অনুমানের ওপর কারও হাতে থলে থাকলে অটোরিকশা নিয়ে টান দিয়ে নিয়ে যান। আবার কখনো গাড়ি দূরে রেখে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। দলে চার থেকে পাঁচজন সদস্য থাকেন।

ছিনতাইয়ের শিকার মেসার্স সাহাব উদ্দিন অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোম্পানির পণ্য বিক্রি বাবদ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে অটোরিকশায় ওঠার সময় ছিনতাইকারী হাসেমসহ কয়েকজন ছুরি নিয়ে তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেন। টাকা নিয়ে তাঁরা পালানোর সময় চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। ইতিমধ্যে পালিয়ে যান বাকিরা। লোকজন দুজনকে ধরে ফেলে। এই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী হাসেমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি, বায়েজিদ বোস্তামী ও ডবলমুরিং থানায় তিনটি করে, হালিশহর ও বন্দর থানায় দুটি করে এবং নোয়াখালীর হাতিয়া থানায় দুটি দস্যুতার মামলা রয়েছে। সব কটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। তবে মামলায় এখনো সাজা হয়নি। গত আট বছরে হাসেম নয়বার কারাগারে গেছেন। বেরিয়ে এসে প্রতিবারই ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। এবার আবারও আদালতের মাধ্যমে বুধবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, জামিন পাওয়া প্রত্যেকের অধিকার। কিন্তু তালিকাভুক্ত কোনো ছিনতাইকারী যাতে কম সময়ের মধ্যে বের হতে না পারেন সে জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির সময় বিষয়টি আদালতে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য আসামি সব পরিসংখ্যান পুলিশকে যথাসময়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জানাতে হবে।