পাখির জন্য পাহারা

মহল্লার ব্যস্ত রাস্তা। মানুষজন আর যানবাহনের চলাচলমুখরতার মধ্যে পাশের একটি জলাশয়ের দিকে নজর সবার। জলাশয় ঘিরে চলে আশপাশ এলাকার মানুষের নজরদারি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ স্বেচ্ছায় পাহারার পেছনে রয়েছে পাখির প্রতি পরম এক মমত্ব। জলাশয়ে দিনের আহারে ব্যস্ত থাকা কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখির সুরক্ষা।

জলাশয়টি পড়েছে সিলেট নগরের ঘাসিটুলা এলাকায়। সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাভুক্ত। এবারের শীতের শুরুতে পরিযায়ী পাখি আসায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছায় পাহারা দিয়ে পাখি রক্ষার কাজটি করছেন প্রায় চার মাস ধরে।

গতকাল রোববার বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের একটি দল ঘাসিটুলার ওই এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসীর পাহারায় সুরক্ষিত পাখিদের বিচরণ পর্যবেক্ষণ করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, জলাশয়ের প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে পাখির বিচরণ। বালিহাঁস ছাড়াও আছে দেশীয় কানিবক ও পানকৌড়ি। সংখ্যায় কয়েক হাজার হবে। পাখিরা নির্বিঘ্নে আহারে ব্যস্ত, যেন ওড়াওড়ির সময় নেই। কান পাতলে শোনা যায় ডানা ঝাপটানো আর কিচিরমিচির। ভোরের দিকে এসব পাখি আসে। ফেরে সন্ধ্যা গড়িয়ে অনেকটা রাত নামলে।

 পাখি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষক তানিয়া খান বলেন, ‘সব পাখিই বালিহাঁস প্রজাতির। এসব পাখি হাওরে বা মুক্ত জলাশয়ে থাকার কথা। কিন্তু আমাদের হাওরগুলো এখন শিকারিদের কারণে পরিযায়ী পাখির বিচরণ অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। প্রথমত অভয় পাওয়া আর দ্বিতীয়ত খাবার পাওয়ায় এ পাখিগুলো নগরের ব্যস্ত এলাকার জলাশয়ে গিয়ে আবাস গড়েছে। যত দিন এরা সুরক্ষিত থাকবে, তত দিনই থাকবে।

সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার সময় বাপা প্রতিনিধিরা এলাকাবাসীকে অভিনন্দিত করেন। পরিযায়ী পাখির সুরক্ষায় এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে আগামী বছরের শুরুতে পাখি শিকারবিরোধী সচেতনতামূলক কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সিলেট নগরে এ রকম আরও অনেক জলাশয়, ডোবা আর দিঘি রয়েছে। ঘাসিটুলা এলাকাবাসীর মতো অন্যান্য এলাকা সচেতন হলে পাখির নিরাপদ বিচরণ গড়ে তোলা যাবে।

এলাকাবাসী বলেন, সরকারি খাস খতিয়ানের জলাশয়ের এক পাশে মহল্লার কবরস্থান। টিলাশ্রেণির ওই স্থানে কিছু গাছগাছালি থাকায় দেশীয় পাখির বিচরণ রয়েছে। কিন্তু জলাশয়ে পাখিদের বিচরণ এবারই প্রথম দেখা গেছে। ঘাসিটুলার স্থায়ী বাসিন্দা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, শীতের শুরুতে একটি ভোরবেলা দেখা যায় সবুজ কচুরিপানার মধ্যে স্তূপ স্তূপ খয়েরি রং। এর মধ্যে ওড়াওড়ি আর কিচিরমিচির কলরব। একদিন, দুদিন প্রত্যক্ষ করার পর শেষে তাঁরা নিশ্চিত হলেন, আহারের জন্য এসেছে পাখিরা। ভোরে আসে আর সন্ধ্যায় ফিরে যায়। সপ্তাহ খানেক পর এলাকাবাসী বসে পাখির সুরক্ষায় যাঁর যাঁর মতো পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেন। মঈন বলেন, ‘আমি ফজরের নামাজ পড়ে এখানে ঘোরাফেরা করি। পাখি শিকার তো দূরের কথা, একটি ঢিল যাতে কেউ না মারে, সেদিকে কড়া নজর রাখি।’

ঘাসিটুলার সামাজিক সংগঠন ‘সবুজসেনা’ জলাশয়ে পাখির নিরাপত্তার বিষয়টি নজরদারি ও স্বেচ্ছায় পাহারার কার্যক্রম সমন্বয় করছে বলে জানা গেছে। এ সংগঠনের সংগঠক মোহাম্মদ আফতাব বলেন, ‘শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে পাখির সংখ্যা কমছে। তবে আগামীবার যাতে নিরাপদে আবার আসে, সে জন্য আমাদের অপেক্ষাও থাকবে।’