রায় শুনে শুকরিয়া নামাজ পড়েছি: রূপার মা

রূপার মা হাসনাহেনা বানু। ছবি: প্রথম আলো
রূপার মা হাসনাহেনা বানু। ছবি: প্রথম আলো

ফজরের নামাজ পড়ে মুঠোফোন পাশে নিয়েই জায়নামাজে বসে ছিলেন রূপার মা। রায় শোনার পর চার রাকাত শুকরিয়া নামাজ পড়েন। রূপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিবার। এলাকার লোকজনসহ স্থানীয় নেতারাও এ রায়ে তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আজ সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়। পাঁচ আসামির চারজনের ফাঁসি, একজনের সাত বছর কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবু মনসুর মিয়া। একই সঙ্গে রূপাকে যে বাসের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, সেই বাসটির নাম পরিবর্তন করে রূপার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রূপার মা হাসনাহেনা বানু বলেন, ‘অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং মেয়ের আত্মার শান্তি কামনায় রোজা রেখেছি। রায়ে কী হয়, তা শোনার জন্য ফজরের নামাজ আদায় করে মুঠোফোন পাশে রেখে জায়নামাজেই বসে ছিলাম। রায় শোনার পর চার রাকাত শোকরিয়া নামাজ আদায় করেছি। যে রায় হয়েছে, তাতে আমি খুশি। এখন একটাই চাওয়া, মরার আগে ফাঁসির আদেশ দ্রুত কার্যকর যেন হয়।’ বড় ছেলে হাফিজুর রহমান ফোনে রায় ঘোষণার খবর জানিয়েছেন তাঁকে।

তিনি আরও বলেন, ‘রূপা বলত, পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে। মা আর ভাইবোনদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। মেয়েকে নিয়ে কত যে আশা ছিল, কত যে স্বপ্ন ছিল, তা আর পূরণ হলো না। পাঁচ ধর্ষক ও হত্যাকারী তা পূরণ হতে দিল না। আমি প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ এ হত্যার বিচারের দাবিতে যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

মাত্র সাত মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করায় বিচারব্যবস্থার ওপর গভীর আস্থা ও সন্তোষ প্রকাশ করেন রূপার ছোট বোন পপি। তিনি বলেন, ‘দুই বোন ছিলাম জোড়া কবুতরের মতো। ডানা মেলে উড়তে পারতাম না ঠিকই; তবে মনের আকাশে একসঙ্গে পাখা মেলে ঘুরতাম। পরিবারের সীমাহীন দৈন্য থাকার পরও দুই বোনে মিলে আনন্দ আর হইহুল্লড়ে মেতে থাকতাম। ভাবতে অবাক লাগে, এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতি। আপুর মৃত্যুর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বগুড়ায় এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে আমাকে অফিস সহকারী পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি সেখানেই আছি। যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে বাসাভাড়া দেওয়ার পর তেমন কিছুই থাকে না। অনেক কষ্টে অসুস্থ মা, ভাই-ভাবি, ভাতিজি নিয়ে চলছে সাতজনের সংসার।’

রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে এই প্রথম কোনো ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামিদের সাত মাসে বিচারের রায় দেওয়া হলো। চার আসামির ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার জন্য দাবি জানাই।’

তাড়াশ উপজেলা নাগরিক আন্দোলনের নেতা আবদুর রাজ্জাক বলেন, রূপা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মনুষ্যত্বের চরম লঙ্ঘন। এ রায় দেশে নারী নির্যাতনের ব্যাপকতা হ্রাসে সহায়ক হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট বিকেলে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী নিরাপদ পরিবহনের ‘ছোঁয়া’ নামের বাসের যাত্রী রূপাকে বাসের ভেতর চালক, সুপারভাইজার এবং তিন হেলপার ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দেন।