ঢাকায় বাধা ছাড়াই বিএনপির কর্মসূচি

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিএনপির মানববন্ধনটি রূপ নেয় অনেকটা জনসমাবেশে। কয়েক হাজার নেতা–কর্মীর এই সমাবেশে পুলিশও বাধা দেয়নি।  ছবি: প্রথম আলো
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিএনপির মানববন্ধনটি রূপ নেয় অনেকটা জনসমাবেশে। কয়েক হাজার নেতা–কর্মীর এই সমাবেশে পুলিশও বাধা দেয়নি। ছবি: প্রথম আলো

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ঢাকায় গতকাল সোমবার প্রথম পুলিশি বাধা ছাড়াই দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। ভোলায় পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হন ১০ নেতা-কর্মী। এ ছাড়া অন্তত চার জেলায় বাধা দিয়েছে পুলিশ।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল দেশজুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ডেকেছিল বিএনপি। এদিকে গত রোববার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রথম আলোর পাওয়া তথ্য
অনুযায়ী ছয় জেলায় বিএনপি-জামায়াতের ৭৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় আটক হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামানসহ ১৮ জন। তবে বিএনপির হিসাবে
সারা দেশে গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮৮ জন। গতকাল দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। কর্মসূচি থেকে খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় মৎস্য ভবনের সামনে থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামানসহ ১৮ জনকে আটক করে পুলিশ।
মানববন্ধন কর্মসূচির পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল বেলা ১১টা। তবে আগে থেকেই একজন-দুজন করে নেতা-কর্মী সেখানে জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার পুরোটাজুড়েই তাঁরা অবস্থান নেন। গাড়িগুলো তখন এক সারিতে করে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এ সময় আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদারের নেতৃত্বে পুলিশ মানববন্ধনস্থলে অবস্থান নেয়। পুলিশের সদস্যদের গাড়ির চলাচল অব্যাহত রাখতে রাস্তার কিছু অংশ ফাঁকা রাখতে সচেষ্ট দেখা যায়। দুই পক্ষের মধ্যে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়েই হবে। তাঁকে ছাড়া এ দেশের কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। আসুন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করি।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে একপর্যায়ে মাইকের তার ছিঁড়ে যায়। এরপর নেতারা মাইক ছাড়াই বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ জনগণের উপস্থিতি প্রমাণ করে খালেদা জিয়া দেশে জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁকে অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চার দিন ধরে ডিভিশন না দিয়ে সরকার আমাদের নেত্রীকে একজন সাধারণ বন্দী হিসেবে কষ্ট দিয়েছে। সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যত ষড়যন্ত্র হোক, নির্বাচন খালেদা জিয়াকে নিয়েই হবে। তাঁকে ছাড়া কেউ নির্বাচনের চিন্তা করলে সেটা হবে দুঃস্বপ্ন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি দুই দিন বিক্ষোভ কর্মসূচির পর শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে তিন দিনের টানা কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার প্রথম দিনের কর্মসূচি হিসেবে এই মানববন্ধন করা হয়। আজ মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে অবস্থান এবং পরদিন বুধবার অনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
গতকালের মানববন্ধনে বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নাল আবেদীন, জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির, ফজলুল হক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সৈয়দ এমরান সালেহ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মোস্তফা জামাল হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান, অপর অংশের হামদুল্লাহ মেহেদি, এলডিপির সাহাদাত হোসেন, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারা দেশে আটক ৬১, চার জেলায় বাধা
প্রথম আলোর পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল ছয় জেলায় বিএনপি-জামায়াতের ৬১ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বিএনপির হিসাবে এই সংখ্যা ১০ জেলায় ৮৮। গতকাল দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানানো হয়।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয়, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর:
ভোলায় সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা সদর রোডে দলীয় কার্যালয়ের পেছনে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে নেতা-কর্মীরা মানববন্ধনে দাঁড়ালে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় নেতা-কর্মীদের। এ সময় আহত হন ১০ জন। আটক করা হয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাদের এবং ভোলা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক সিকদারকে।
ভোলা মডেল থানার ওসি মো. ছগির মিয়া বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের সেই অপচেষ্টা বানচাল করে দেওয়া হয়েছে।
ঝালকাঠিতে সকাল ১০টায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন নেতা-কর্মীরা। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান অভিযোগ করেন, জেলা কার্যালয়ের সামনে সীমিত আকারে কর্মসূচি পালনের শর্ত দেয় পুলিশ। তাদের বেঁধে দেওয়া ১০ মিনিটের মধ্যে মানববন্ধন শেষ করতে হয়।
বরিশাল সদর রোডে মানববন্ধন করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখানে পারেনি। পরে পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে অশ্বিনীকুমার হল-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তারা।
মৌলভীবাজারে পুলিশি বাধায় জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের নেতৃত্বাধীন অংশ শহরের কুসুমবাগ এলাকায় এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন অংশ শমশেরনগর সড়ক এলাকায় মানববন্ধন করতে পারেনি। মৌলভীবাজার সদরে জামায়াত ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
লক্ষ্মীপুরে ডিবি পুলিশের বাধায় বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় চারজনকে আটক করে পুলিশ। জেলার রামগতি উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হান্নানসহ রামগতি ও কমলনগরে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির ছয় নেতা-কর্মী।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমান, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাসেল মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ।
নাটোরের বড়াইগ্রামে গ্রেপ্তার হয়েছেন বনপাড়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার রফিকুল ইসলামসহ তিনজন।
সাতক্ষীরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও সাবেক সাংসদ গাজি নজরুল ইসলামসহ ৪১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।