সিলেটে চা-ভূমি কেটে ছড়া প্রশস্ত!

ছড়ার এপারে সারিবদ্ধ কয়েকটি স্থাপনা। ওপারে চা-বাগান। ছড়া খননকাজের শুরুতে দুই দিকে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হবে। এ কাজের শুরুতে কাটা চলছে টিলাশ্রেণির চা-ভূমি। মাটি কাটার শ্রমিকেরা সমতল থেকে ১৫-২০ ফুট উঁচু টিলাভূমি কেটে ছড়ায় রূপান্তর করছেন।

ছড়াটির নাম কালীছড়া। সিলেট নগরের উত্তর দিকে তারাপুর চা-বাগানের টিলাভূমি কালীছড়ার উৎস। নগরের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কালীছড়া দক্ষিণে সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে ধোপাছড়া নাম ধারণ করে। সিলেট সিটি করপোরেশনের চলমান ব্যয়বহুল প্রকল্পের অংশ হিসেবে কালীছড়া প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।

সিলেট নগরের দক্ষিণ দিকে সুরমা নদী, উত্তর-পূর্বে চা-বাগান ও টিলা। টিলা থেকে প্রাকৃতিকভাবে আসা ৯টি ছড়া এবং ৩টি খাল নগরের বিভিন্ন মহল্লার মধ্য দিয়ে সুরমায় গিয়ে মিশেছে। এগুলোই শহরকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে জলপ্রবাহের প্রাকৃতিক ধারা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কালীছড়া উৎসমুখ থেকে নগরের পশ্চিম অংশ হয়ে সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে ধোপাছড়া নামে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ সচল করে জলাবদ্ধতামুক্ত নগর গড়তে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়।এটি সিলেট নগরে সবচেয়ে বড় অঙ্কের বরাদ্দ। এর মধ্যে ১৫০ কোটি টাকার কাজ চলতি অর্থবছরে শুরু হয়েছে। কালীছড়ার উৎসমুখে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাপুর চা-বাগান এলাকাকে বিভক্ত করে রেখেছে কালীছড়ার একটি সেতু। ছড়ার উৎসমুখ সেতুর উত্তর দিক। পূর্বদিক পড়েছে চা-বাগান এলাকা, পশ্চিমে রাস্তা ও বসতি এলাকা। ছড়াকে পেছনে ফেলে রয়েছে অন্তত ১৫টি স্থাপনা। এর মধ্যে দোতলা পাকা স্থাপনা রয়েছে। সেটি সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ থেকে ছড়া খননকাজের শুরুতে মাপজোখ করা হয়। তখন কালীছড়ার তীরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ সব স্থাপনা ভাঙা পড়ার বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো হয়। মাপজোখ করে যাওয়ার পর ২০ জানুয়ারি থেকে স্থাপনাগুলো রেখে চা-বাগানের টিলাভূমি কাটতে দেখা গেছে। এতে করে ছড়ার উৎসমুখে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান বলেন, চা-ভূমি সিটি করপোরেশনের সীমানার বাইরে। তাই কাজটি সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে করা হচ্ছে। যে জায়গা এখন খোঁড়া হচ্ছে, সেটি প্রতিরক্ষা দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত করা হবে। এপারের স্থাপনা রক্ষায় ওপারে খনন করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ অন্যান্য স্থাপনা অপসারণ পর্যায়ক্রমে করা হবে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখায় জরিপও হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, ছড়া পুনরুদ্ধারের জরিপে ১৯৫৬ সালের রেকর্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ছড়ায় ৯৪৭টি পাকা ভবনসহ দুই শতাধিক স্থাপনা রয়েছে। কালীছড়ার একদিকে চা-ভূমি কাটা, অন্যদিকে স্থাপনা সুরক্ষিত রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তারাপুর চা-বাগানের বর্তমান মালিক পংকজ কুমার গুপ্ত  বলেন, ‘শুনছি, ছড়ার গতিপথ চা-বাগানের দিকে নেওয়া হচ্ছে। এটা আইনসিদ্ধ নয়। আমি দেখে এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব।’