২৫ ফুট দীর্ঘ হনুমান মূর্তি, বসছে মিলনমেলা

মহাবীর হনুমান দেবতার পূজার্চনা কাল বুধবার। এ নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পীড়ারবাড়ি, কোটালীপাড়া উপজেলা, গোপালগঞ্জ, ১৩ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
মহাবীর হনুমান দেবতার পূজার্চনা কাল বুধবার। এ নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পীড়ারবাড়ি, কোটালীপাড়া উপজেলা, গোপালগঞ্জ, ১৩ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

হনুমান দেবতার পূজাকে কেন্দ্র করে দুই জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মিলনমেলা বসতে যাচ্ছে। কাল বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী চলবে দেবতার পূজার্চনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে ২৫ ফুট দীর্ঘ ও আট ফুট চওড়া হনুমান দেবতার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির এই মূর্তি এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বসছে এ মিলনমেলা। যার একটি অংশে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার শশীকর গ্রাম ও অপর পাশে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পীড়ারবাড়ি। এই এলাকা দুটির বেশির ভাগ মানুষই হিন্দুধর্মাবলম্বীর। দুই এলাকার সীমানার একটি মাঠের মধ্যে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে হনুমান দেবতার পূজার্চনা, সম্প্রীতির মেলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের জন্য থাকছে ফ্রিজ, এলইডি টিভি, ল্যাপটপ, নোটবুকসহ নানা পুরস্কার।

পূজার আয়োজকেরা জানান, রামায়ণের পৌরাণিক কাহিনিতে হনুমানের মতো বলশালী বীর আর নেই। তাই রামায়ণের ১৮টি কাণ্ডের সঙ্গে মিলিয়ে হনুমানের বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে। হিন্দুরীতি অনুসারে কাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে পয়লা ফাল্গুন গণনা করা হবে। সেই অনুসারে ফাল্গুনের ৩ তারিখ পর্যন্ত, অর্থাৎ শুক্রবার পর্যন্ত চলবে দেবতার পূজা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পূজা উপলক্ষে নির্মাণ করা হয়েছে ২৫ ফুট দীর্ঘ ও আট ফুট চওড়ার হনুমান দেবতার মূর্তি। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। হনুমানের দীর্ঘ এই মূর্তিটি দেখতে ভিড় করছে দূর থেকে আসা লোকজন। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে চার স্তরবিশিষ্ট ব্যতিক্রমী একটি মঞ্চ। প্রথমবারের মতো এই আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী।

মহাবীর হনুমান পূজার্চনা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি তারাপদ বাড়ৈ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকল পূজার মূলেই শান্তি। আমরা দুই জেলার মানুষ পাশাপাশি থাকি। ভালো-মন্দ সবই আমরা ভাগাভাগি করে নিই। তাই আমাদের দুই জেলার মানুষের মাঝে সম্প্রীতি তুলে ধরতেই এই পূজার আয়োজন।’

তারাপদ বাড়ৈ আরও বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন স্থানে খুব বড় পরিসরে এই পূজা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে এই প্রথম এত বড় পরিসরে এই হনুমান দেবতার পূজা করা হচ্ছে। সবার সহযোগিতা পেলে প্রতিবছর পূজার এই দিনকে আমরা এমন উৎসব আকারে উপস্থাপন করতে চাই।’

স্থানীয় প্রতিমাশিল্পী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী হরষিত বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড় মাস সময় ধরে হনুমানের বিগ্রহটি তৈরিতে মাটির কাজ করছি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের রং-তুলির কাজ। বিগ্রহটির মূল উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। বেদি আর মুকুট মিলিয়ে সর্বমোট উচ্চতা ২৫ ফুটের বেশি।’

কোটালীপাড়ার কলেজছাত্র সুজিত মৃধা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এত বড় পরিসরে এই পূজার আয়োজন দেখে আমরা খুব আনন্দিত। এই পূজা উপলক্ষে আমাদের অনেক বন্ধু দূর থেকে ছুটে এসেছে।’

হনুমান দেবতার পূজার্চনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। পূজার্চনার উদ্বোধন করবেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।