পিরোজপুর ও টাঙ্গাইলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটক ২

এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটক এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ১০ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) প্রশ্নের উত্তর মুঠোফোনে পাওয়ায় এক যুবককে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চারজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও বহিরাগত একজনকে আটক করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বহিষ্কৃত শিক্ষকেরা হলেন প্রশান্ত বাড়ৈ, মনিরা বেগম, মনির হাওলাদার, কবিতা কীর্তনীয়া, অশোক জয়ধর, শামিম আহমেদ, মহসিন তালুকদার, লায়েকুজ্জামান, নিয়াজ মকদুম ও জয়প্রকাশ বিশ্বাস।

কোটালীপাড়া এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব সুরেশ দাস জানান, ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আজ সকালে পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন সেটের প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা খাতায় একই প্রশ্ন কোড পূরণ করে। ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত ১০ জন শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন কোড যাচাই–বাছাই না করে স্বাক্ষর করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি দেখতে পান। পরে তিনি ওই ১০ শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করেন।
কেন্দ্রের সচিব জানান, ওই শিক্ষকেরা আর কোনো দিনই পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তাৎক্ষণিকভাবে বাইরে থেকে শিক্ষক এনে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয় বলে জানান কেন্দ্র সচিব।

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) প্রশ্নের উত্তর মুঠোফোনে পাওয়ায় রিপন চক্রবর্তী (৩০) নামের এক যুবককে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিম ঝুমুর বালা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এ কারাদণ্ড দেন। রিপন চক্রবর্তী উপজেলার গোবরধন গ্রামের শংকর দেব চক্রবর্তীর ছেলে।

নাজিরপুরের বৈঠাকাটা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ কুমার মণ্ডল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপন চক্রবর্তীকে একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে আটক করা হয়। তাঁর মুঠোফোন জব্দ করা হয়। মুঠোফোন পর্যালোচনা করে এসএসসি পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। উত্তরগুলোর সঙ্গে প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়ায় রিপনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। রিপন নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করার চেষ্টা করেছিলেন।

অন্যদিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে চারজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও বহিরাগত একজনকে আটক করা হয়েছে। আটক যুবকের নাম সিজেন খান ওরফে আবদুল কাইয়ুম। তিনি উপজেলার অর্জুনা গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে। এ সময় প্রশ্নফাঁসে জড়িত পাপ্পু নামের এক যুবক পালিয়ে যান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী হাকিম শরিফ আহম্মেদ জানান, ভূঞাপুর পাইলট সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কয়েকজন শিক্ষার্থী হলে প্রবেশ না করে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন দেখছিল। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলে পাপ্পু নামের এক যুবক পালিয়ে যান। পরে ঘটনায় চারজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বহিরাগত ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সিজেন খানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

তথ্য দিয়েছেন পিরোজপুর ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি এবং গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা।