কোথাও শান্তিপূর্ণ, কোথাও বাধা

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।  ছবি: প্রথম আলো
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ছবি: প্রথম আলো
  • ঢাকায় পুলিশ বাধা দেয়নি।
  • আজ বুধবার বিএনপির ‘অনশন’ কর্মসূচি।
  • সকাল ১০টা-বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশন।
  • অনশনের মধ্য দিয়ে বিএনপির তিন দিনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে বেশির ভাগ জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলেও, কোথাও কোথাও পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন।

রাজধানী ঢাকায় পুলিশ বাধা দেয়নি, তবে অবস্থান কর্মসূচির স্থল বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছিল। ঢাকায় প্রথমে নির্ধারিত স্থনে কর্মসূচি করতে পারেনি। পরে পৌনে এক ঘণ্টার নোটিশে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এতে দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সকাল সোয়া ১০টার পর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কর্মসূচি হচ্ছে না। এর বদলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি ছিল প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে দেওয়া হয়নি। এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ তা-ও বাতিল করা হয়। তারা আমাদের বাধ্য করেছে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করার জন্য।’

আজ বুধবার বিএনপির ‘অনশন’ কর্মসূচি। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতীকী অনশন হবে। এর আগে গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। আজকের অনশনের মধ্য দিয়ে বিএনপির তিন দিনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।

গতকাল অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেড় শ বছরের পুরোনো একটি জীর্ণ ভবনে রাখা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর বিচার হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকার দেউলিয়া হয়েছে বলেই আজকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং প্রায় ১৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে সরকার মনে করছে, বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে, দমিয়ে রাখা যাবে। সেটা যাবে না। দেশের মানুষ অবশ্যই কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা ২০০৭ সালে কারাবন্দী হয়েছি, জেল কোড অনুযায়ী প্রত্যেকে গেট থেকে সরাসরি ডিভিশন পেয়েছি। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে তিন দিন সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে। কারা এটি করেছে, তাদের বিচার চাই। এতে প্রমাণ হয়, এটা রাজনৈতিক শত্রুতা।’ তিনি বলেন, বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায় সরকার। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া এ দেশের জনগণ আগামী নির্বাচন হতে দেবে না।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, বরকত উল্লা, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, এলডিপির নেতা শাহাদত সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ।

অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ঘিরে রাখে। এ সময় রাস্তার এক পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।